রবিবার | ১৯ মে, ২০২৪

‘দায়িত্ববোধ’ আর ‘যৌথ প্রচেষ্টায়’ রাঙামাটিতে সংক্রমণ কম হয়েছে : আলমগীর কবির

প্রকাশঃ ১৮ জুলাই, ২০২০ ০৪:৫৪:২৬ | আপডেটঃ ১৭ মে, ২০২৪ ০২:১৭:১০  |  ১৬৬৫
জিয়াউর রহমান জুয়েল, বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি। পহেলা জুনের আগ পর্যন্ত যে প্রাথমিক লকডাউনগুলো ছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা চেষ্টা করেছি। তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সর্বশেষ জেলা হিসেবে রাঙামাটিতে করোনা সংক্রমন হয়’। বৈশ্বিক মহামারী করোনা বিস্তাররোধে ‘সাময়িক সাফল্যের’ এ গল্প শুনিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির-পিপিএম(সেবা)।

বলেন, ‘করোনা পিরিয়ডে সরকার যে ধরণের কার্যক্রম আমাদের করতে বলেছেন আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি। বিশেষ করে ‘সামাজিক দুরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার ব্যবহার ও জন সমাগম’ এর প্রতি আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কারণে অনেক দিন পর্যন্ত রাঙামাটি করোনা মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম’। তবে সেটা আর কেন ধরে রাখা যায়নি তার জবাবে বলেন, কিন্তু ৩১ মে দেশব্যাপী ‘লকডাউন’ শিথিল হলে এক জুনের পর থেকে ধীরে ধীরে রাঙামাটি জেলায় করোনা বিস্তার শুরু করে’।

ভূ-আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি। পর্যটন শহর হওয়ায় প্রায় সারা বছরই পর্যটকের সমাগম থাকে। তাই ঝঁকিও বেশি। কিন্তু করোনা আক্রান্তের দিক থেকে দেশের সর্বশেষ জেলা এটি। এমনকি সংক্রমণের দৌড়েও এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। এটি সম্ভব হয়েছে রাঙামাটি পুলিশ, জেলা প্রশাসন আর সেনাবাহিনীর ‘দায়িত্ববোধ’ আর ‘যৌথ প্রচেষ্টায়’-সরল স্বিকারোক্তি পুলিশ সুপারের।

যা করেছে পুলিশ: সংক্রমণের শুরু থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলা পুলিশ সরকারের নেয়া সমন্বিত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। পর্যটন এলাকা হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙামাটি শহরে দর্শনার্থীরা এসে থাকেন। শুরুতেই সরকারের নির্দেশিত ঘোষণা অনুযায়ী পর্যটকদের আগমন নিরুৎসাহিত করা হয়। পর্যটনের স্পটগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার কারণে পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ৩১ মে দেশব্যাপী লকডাউন শিথিল হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে রাঙামাটির।

রাঙামাটির বাইরে থেকে আগতদের বাড়ি চিহ্নিত করে লাল পতাকা টানানো ও হোমকোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, প্রতিবেশিদের সচেতন করা এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ডিএসবি (গোয়েন্দা) পুলিশের টীমের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছে পুলিশ। সামাজিক দুরত্ব ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালনের সাথে মানবিক কাজেও অংশ নিয়েছে জেলা পুলিশ। তারা অভাবী দুই হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। ফোন বা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তথ্য পেয়ে ঘরবন্দি শিক্ষার্থিদের বাড়িতে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিয়েছে জেলা পুলিশ।

আক্রান্ত ১৭৩ পুলিশ: সেনাসদস্যদের সাথে নিয়ে ‘করোনার মাঠ’ সার্বক্ষণিক সামলে রেখেছেন জেলা পুলিশের ‘মাঠের সম্মুখ যোদ্ধারা’। এজন্য তাদের মূল্যও দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৭৩ জন পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৮৮ জন সুস্থ্য হয়েছেন। আর চিকিৎসাধীন আছেন ৮৫ জন। তবে স্বস্তির কথা, পুলিশে এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানী নেই। ৬ মে শিশু ও নার্সসহ ৪ জন আক্রান্ত দিয়ে এর সংক্রমন শুরু হয়। আর ১৭ জুলাই পর্যন্ত  আক্রান্তের সংখ্যা ঠেকেছে ৪৯৫ জনে। মারা গেছেন ৮জন। আশার কথা, এরইমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৪৮ জন।

দিনরাত মাঠে থাকতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ সদস্যরাও। পুলিশ সুপার বলেন, ‘আক্রান্ত ১৭৩ পুলিশ সদস্যের হালকা জ¦র, গলাব্যাথা, কাশি ছাড়া অধিকাংশরই কোন উপসর্গ ছিল না। এতে রোগী ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়েছে। আক্রান্তদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার নির্দেশিত নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ কেয়ারে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে আইসোলেশন করা, উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা ও স্বাস্থ্য বিধিবিধান পালন করা হয়েছে। যার কারণে এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানী নেই’।

বাড়ছে চ্যালেঞ্জ: করোনা সংকটেও দায়িত্বপালনে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে আছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, ‘আয়তনে বড় জেলা হলেও রাঙামাটিতে বসবাস ও আবাদযোগ্য জমি কম। তাই অল্প জায়গাতেই ঘন বসতি বেশি। যার কারণে সামাজিক দুরত্ব মানানো সহজ হয় না। এছাড়া চট্টগ্রামের সাথেই রাঙামাটির সার্বিক যোগাযোগ বেশি। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বেশি সংক্রমিত হওয়ায় রাঙামাটি সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক বেশি। যেহেতু এখন পর্যন্ত প্রতিষেধক আবিস্কার হয় নাই। তাই করোনা থেকে বাঁচতে ‘সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলার বিকল্প দেখছি না’।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions