শুক্রবার | ০৩ মে, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকেন না বরাদ্দকৃতরা, ঝুলছে তালা

প্রকাশঃ ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:৪২:১৫ | আপডেটঃ ০২ মে, ২০২৪ ০৯:৪৫:৪২  |  ১৯৩

সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)। পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির লংগদুতে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের অনেকগুলো ঘরেই ঝুলছে তালা। থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। আর যারা থাকছেন তাদের অভিযোগ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ বা সৌর-বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির জন্য দেওয়া অধিকাংশ টিউবওয়েল গুলোও নষ্ট, ঘরে বাইরে ধরেছে ফাঁটল ঈদ উৎসবেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনের কেউই রাখেন না তাদের খোঁজ!

 

দুর্গম লংগদু উপজেলার প্রত্যন্ত কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের বাজার টিলা ইসলামপুর এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প- ৩৪টি ঘরের মধ্যে ২৪টি ঘরে বসবাস করে লোকজন। ফাঁকা ১০টি ঘরে এখন খড়কুটো গরু-ছাগল রাখা হয়। আবার কোনো কোনো ঘরে অসহায় দরিদ্র পরিবারের বসবাস রয়েছে মালিক পক্ষের অনুমতিতে

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ২নম্বর কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক পাশে ১৫টি, অন্য পাশে ১৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫টির মধ্যে ১১টিতে পরিবার বসবাস শুরু করলেও এখনো ঘরে ওঠেনি ৪টি পরিবার। তার মধ্যে ২টি ঘর তালাবন্ধ। অন্য পাশে ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৩টির মালিক পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও ৪টি ঘর তালাবন্ধ। অন্য ২টিতে থাকে আশ্রয়হীন অসহায় দুই পরিবার। নির্মাণ করা কয়েকটি ঘরের দেয়াল মেঝেতে ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও ধসেও পড়েছে ঘরের বিভিন্ন অংশ

 

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান, তালাবন্ধ করে বেশির ভাগ লোকজনই চলে গেছেন। তাঁদের কেউ থাকেন নিজ বাড়িতেই, কেউ থাকেন এলাকার বাহিরে। এমনও আছেন, শুধু ঘর তালাবন্ধ করে চলে গেছেন, আর কখনো আসেননি। জন্যই বেশির ভাগ ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। জায়গা কম পড়লে কেউ ফাঁকা ঘরগুলোতে খড়কুটো গরু-ছাগল বেঁধে রাখছেন। প্রকল্পের এই ঘরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে এবং ঘরের মেঝেতে ইঁদুর গর্ত করেছে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। 

 

আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ১৭নম্বর ঘরে বসবাস করেন মুজিবুর মিয়া, তবে এঘরের প্রকৃত মালিক টুনু মিয়া। মুজিব বলেন, অনেকদিন ধরে নিজের কোনো ভিটেমাটি ঘর না থাকায় টুনু মিয়ার সম্মতিতে পরিবার নিয়ে এখানে আছেন। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি স্থানীয় নেতাদের ধরেও তিনি ঘর পাননি বলে তার অভিযোগ

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘যাঁরা ঘর পেয়েও সেখানে থাকছেন না, তাঁদের আগে থেকেই বড় বড় ঘরবাড়ি রয়েছে। তাই তাঁরা এসব ঘর নামের মুরগির খুপরিতে থাকছেন না, শুধু দখলে রেখেছেন। এই এলাকাতেই ভূমিহীন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা ঘর পাননি।’ 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই বসবাসকারী দুই নেতার দুইটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। তারা হলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৯নম্বর ঘরের মালিক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে আছেন। অপরদিকে ৭নম্বর ঘরের মালিক সাত্তার একই ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ সেখানে থাকেন না। কারণ তাঁদের আগে থেকেই বড় বড় ঘর আছে। ১০-১২টি গরু-ছাগল আছে। বিঘায় বিঘায় আবাদি জমি। সে কারণে তাঁরা ওই ছোট ঘরে থাকতে চান না।

 

প্রকল্পের ১৫নম্বর ঘরের মালিক রাজ্জাক। তবে সেখানে এখন থাকেন ময়না বেগম। তিনি বলেন, গত ২বছর ধরে এই ঘরে আছি। সরকারি ঘর পায় বড় লোকে, আমরা গরিব তাই ঘর পাই না! আপনাদের কাছে অনুরোধ করি আপনারা আমার বাচ্চা নিয়ে থাকার জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেন

 

জয়নব নামে একজন বলেন, ‘এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক বছর ধরে থাকতেছি। এই ঈদের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কেউই কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। ঈদ খুব কষ্টে কাটাতে হয়েছে।তিনি আরও বলেন, আগে ইউএনও স্যার আসতো, আমাদের ভালো মন্দ দেখতো-জানতো; বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করতো। এখন কেউই কোন খোঁজ খবর নেয় না এবং সরকারি কোনো অনুদান পাই নাই

 

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা আরও জানান, ৩৪টি পরিবারের জন্য মাত্র ৬টি টিউবওয়েল দেয়া হলেও সেখান থেকে ২টি সম্পূর্ণ এবং ১টি আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তারা এই তীব্র তাপদাহেও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। এছাড়াও সরকারি অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা পাননা বলেও আক্ষেপ তাদের!

 

জানতে চাইলে ইসলামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, - মাসে একদিন থাকে বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরের মালিকরা। তাদেরকে এমনও বলা হয়েছে নিজেদের আশ্রয়নের ঘর প্রয়োজন না হলে স্থানীয় অসহায় লোকদের দেয়ার জন্য। তবুও তারা কারো কথা মান্য করে নাই। পরে তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেও কোন ফল পাইনি। তবে ঘরগুলো ভূমি-গৃহহীন মানুষেরই প্রাপ্য

 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক দেওয়ান জানান, আমি বিষয়টি প্রথম থেকে জানার পরই আশ্রয়ণ পল্লীতে গিয়ে যারা থাকে না তাদের ঘরের ক্রমিক নম্বর মালিকের নামসহ তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত এর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, বরং পূর্বের অবস্থাই বিদ্যমান

 

লংগদু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন চাকমা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প- এর কার্যক্রমের সময় আমি ছিলাম না, এখানে আমি সদ্য এসেছি। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ পাওয়া ঘরে উপকারভোগীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে। যাঁরা ঘরগুলোতে থাকতে চান না, তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে

 

এবিষয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের সৌর-বিদ্যুৎসহ সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকটে দূরীকরণে নতুন করে টিউবওয়েল প্রদান করা হবে। এছাড়া তদন্ত করে যৌক্তিক সকল সমস্যা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করার চেষ্টা করবো।

 

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions