কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। জমে উঠেছে বান্দরবানের ইফতারির বাজার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ফুটপাতের ছোট চায়ের দোকান, টঙের দোকানে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকমের ইফতার সামগ্রী।জেলা শহরের বিভিন্ন দোকানে এখন ছোলা,পিয়াজু,বেগুনী,আলুর চপ,শাকবড়া,পুডিং,দই,ফিন্নি, পিঠাসহ নানা রকম ইফতার সামগ্রীর রকমারী বাহার শোভা পাচ্ছে। এদিকে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে একটু ভালো কিছু আয়োজনের জন্য রোজাদাররা ছুটে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন ইফতারির দোকানে ।
বান্দরবান বাজারের ইফতারি বিক্রেতা মো:নাজিম জানান, এবারের ভালো ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা ছোলা,পিয়াজু,বেগুনী,আলুর চপ,শাকবড়াসহ বিভিন্ন আইটেম তৈরি করি আর ভালো বিক্রি হচ্ছে ।
বান্দরবান বাজারের ইফতার বিক্রেতা মো:শাহআলম জানান, ছোলা বুট ১ কেজি ১২০ টাকা, শাহি জিলাপি ১ কেজি ১৬০ টাকা, বেগুনি এক পিচ ৫ টাকা, পেঁয়াজু প্রতি পিচ ২/৩ টাকা, আলুর চপ প্রতি পিচ ৫ টাকা এবং মরিচ্যা চপ প্রতি পিচ ৫ টাকা দরে বিক্রি করছি ।
বড় রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ফুটপাতের ছোট চায়ের দোকান, টঙের দোকান এবং ভাসমান ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকমের ইফতার সামগ্রী। বিক্রেতারা বলছেন, বেলা ২টার পরপর দোকানিরা ইফতারের বাহারি পণ্যসামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন দোকান। বিকাল ৪টা থেকে রোজাদাররা হুমড়ি খেয়ে পড়েন ইফতারি কিনতে, কার আগে কে ইফতারি কিনে বাসায় যাবেন,এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
সরেজমিন বান্দরবান বাজার, বালাঘাটা বাজার,কালাঘাটা বাজার,বাসস্টেশান, ঘুরে দেখা য়ায় প্রত্যেক ইফতারির দোকানে ক্রেতারা ভিড় জমিয়ে ইফতার সামগ্রী ক্রয় করছেন। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত খেজুর কিনছেন ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা আবার হালিম, ফিরনি, পায়েশ, চিকেন পরোটা, চিকেন ফ্রাই, অন্তন, ডিম চপ নেওয়ার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকছে ।
সারাদিন অনাহারে থেকে ইফতারিতে নানান পদের খাবার খেতে রোজাদাররা ঘুরে বেড়ায় এ দোকান থেকে ও দোকানে। জেলা শহরের মসজিদ মার্কেট,ট্রাফিক মোড়,চৌধুরী মার্কেট,রাজার মাঠ,বালাঘাটা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় দোকানের লোভনীয় ইফতার সামগ্রী কিনতে ভিড় দেখা যায় রোজাদার মুসলমানদের।
এদিকে পবিত্র রমজানের মাসের এই বরকতের মাসেই পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর মৌসুমি ফল। আর আম ,লিচু,কলা,পেপেঁ আর আনারসে ভরপূর হয়ে ওঠেছে জেলার বিভিন্ন বাজারগুলো ,আর ইফতারিতে তেল ও ঝাঁলের খাবারের সাথে সাথে রসালে ফল কিনে সারাদিনের ক্লানি আর পুষ্টি মেটাতেই অনেকেই কিনে নিচ্ছে মৌসুমিু ফল। আনারস প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০টাকা, লিচু প্রকারভেদে ২৫০-৩০০টাকা ,আম কেজি ৩০-১০০ টাকা প্রতি কেজি,আর পেপেঁ ৫০-১৫০ টাকা ।
বাজারে ইফতারির জন্য আনারস কিনতে আসা মো:জাহিদ জানান, এই মাস আমাদের সংযমের মাস ,আমরা এই মাসে রোজা রাখি আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। সারাদিন রোজা রেখে আমাদের ভিন্ন স্বাদের ইফতারি কিনতে হয়। ভাগ্য আমাদের এবার অনেক ভালো, এ মাসেই বাজারে প্রচুর মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে । সবাই ন্যায্য দামেই তা ক্রয় করে খাচ্ছে।
বাজারে আম কিনতে আসা মো:সোলেমান জানান,আমি বান্দরবান বাজার থেকে দশ কেজি আম কিনলাম। প্রতি কেজি পঁিচশ টাকায় কিনলাম,দামে ও স্বস্তা আর মানে ও ভালো এই আম। এই পবিত্র রমজান মাসে আম দিয়ে ইফতারের মজাই আলাদা।
এদিকে পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা, দ্রব্যমূল্যর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা,ভেজাল খাদ্য পরিবেশন থেকে বিরত থাকা ও ফরমালিনযুক্ত দ্রব্য বিক্রয় না করে জনসাধারণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য সভা সেমিনার এবং বাজারে কন্টোল রুম স্থাপন করেছে প্রশাসন, আর ভোক্তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতকরণ ও দ্রব্যমূল্যর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বান্দরবান বাজার কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ জানান ,আমরা এই মাসে বান্দরবান বাজারে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেই বাজারের দরদাম নিয়ন্ত্রণ করছি। ব্যাবসায়ীরা যাতে ইফতার সামগ্রীতে কোন রং মেশাতে না পারে তার জন্য আমরা তদারকি করে যাচ্ছি। প্রতিটি দোকানে ইফতারি সামগ্রী বিক্রিতে যতেষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলা হচ্ছে। সকল খাবার ঢেকে রাখা হচ্ছে,আর ক্রেতাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে বিক্রি করার জন্য আমরা সর্বত্র তদারকি অব্যাহত রেখেছি ।
বান্দরবান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো:মুফিদুল আলম জানান,বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বান্দরবানের খাদ্য দ্রব্যর ভেজাল এবং আমাদের দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণয়ের লক্ষে আমরা বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। আমরা বান্দরবান বাজারে একটি কন্টোল রুম স্থাপন করেছি,এবং এই কন্টোলরুম স্থাপনের মাধ্যমে যারাই আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসছে আমরা যাছাই করে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি । কেউ যদি খাদ্যে কোন ধরণের ভেজাল ব্যবহার করে তবে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে অনেককেই আমরা শাস্তি দিয়েছি। আমাদের এই ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান অব্যাহত থাকবে।