সিএইচটি টুডে
ডট কম ডেস্ক। পার্বত্য চট্টগ্রামের
অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের সমস্যা সমাধানের দাবিতে দেশের
বিশিষ্ট নাগরিক
সমাজের ১০৭ জনের স্বাক্ষর
সম্বলিত একটি স্বারকলিপি আজ রোববার
ভারত
প্রত্যাগত শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং
অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত
টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান
ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল
ত্রিপুরার কাছে দেয়া হয়।
এতে অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের করোনাকালীন সমস্যাসহ তাঁদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের সমস্যাসমূহ মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।
স্মারকলিপির শুরুতে করোনা মোকাবিলায় খাদ্য দ্রব্যের ত্রাণ ও পরিবার পিছু ২৫০০ টাকার বিশেষ প্যাকেজ সম্বলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
স্মারকলিপিতে সরকারের প্রশংসনীয় ত্রাণ কার্যক্রম সত্বেও মাঠ পর্যায়ের কিছু সমস্যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদাপূরণ হতে পারেনি মর্মে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, দুর্গম পাহাড়ের অধিকাংশ পরিবার দিন-মজুর ও জুমচাষী হওয়ায় তাদের অধিকাংশের এক সপ্তাহ কিংবা তারও কম দিন চলার মতো খাদ্য মজুদ থাকে। এসময়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিতরণকৃত ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য কদাচিৎ এ সব এলাকায় পৌঁছাতে পেরেছে।
স্বরাকলিপিতে বলা হয়, এলাকায় পানীয় জল, যোগাযোগের জন্য রাস্তা ও যানবাহন, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটে, পাহাড়ে যে সব অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তু রয়েছেন (আনুমানিক ৮৬০০০-৯৬০০০) তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এঁরা বিগত আশির দশকে অভিবাসিত বাঙালি পরিবার ও ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির আওতায় ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থীদের মতো কোন নিয়মিত রেশনও পান না।
এমতাবস্থায়, করোনাকালের এ দুর্যোগকালে এবং অন্যান্যভাবে অভ্যন্তরীণ পাহাড়ী উদ্বাস্তুদের জন্য নিম্ন বর্ণিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
১. অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা;
২. দীর্ঘমেয়াদি ত্রাণ ও যথাযথ পুনর্বাসনসহ যাঁরা বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, নারী প্রধান পরিবার ইত্যাদি তাঁদেরকে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর আওতায় আনা:
৩. ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসিত বাঙালি পরিবারদের অনুরূপ অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদেরকে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নিয়মিত মাসিক রেশনিং-এর আওতায় আনা;
৪. অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদ্বাস্তুদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
৫. ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের কর্ম পরিধি বিস্তৃত করা;
৬. বৎসরে একবার অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্পর্কিত অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
স্মারকলিপিটির কপি, অন্যানের মধ্যে, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ও পদধারী ব্যক্তিবর্গের নিকট প্রেরিত হয়।
তিন পার্বত্য জেলার ৮০ জন অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি উদবাস্তু ব্যক্তিসহ অন্যান্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে নিম্নোক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠন সমূহ অন্যতম:
১. রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, চাকমা সার্কেল চীফ, আইনজীবী, ২. গৌতম দেওয়ান, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, ৩. প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, ৪. নিরূপা দেওয়ান, শিক্ষাবিদ ও সাবেক সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ৫. সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন, ৬. জুয়ামলিয়ান আমলাই, বান্দরবান চ্যাপ্টার প্রধান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন, ৭. প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা, অধ্যক্ষ (অব:), খাগড়াছড়ি কলেজ, ৮. প্রফেসর বোধিসত্ত্ব চাকমা, অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ, সরকারি কলেজ ও সভাপতি, সনাক (টি আই বি), খাগড়াছড়ি। ৯. মধু মঙ্গল চাকমা, সহযোগী অধ্যাপক (অব.), সরকারি কলেজ, খাগড়াছড়ি। ১০. উ ক্য জেন, যুগ্ম সচিব (অব:) ও সাবেক মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ১১. পার্বত্য চট্টগ্রাম হেডম্যান নেটওয়ার্ক। ১২. পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী হেডম্যান ও কার্বারি নেটওয়ার্ক। ১৩. খাগড়াছড়ি জেলা কার্বারি এসোসিয়েশন।১৪. সাজেক ইউনিয়ন কার্বারি এসোসিয়েশন।১৫. বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস পিপলস নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড বায়োডাইভার্সিটি (বিপনেট)। ১৬. বম সোশ্যাল কাউন্সিল।
১৭. মালেইয়া ফাউন্ডেশন। ১৮.
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল
(বি.এম.এস.সি.), ১৯.
ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ (টি.এস.এফ.),
এ ছাড়াও, উক্ত স্মারকলিপির প্রতি বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মানবারধিকার কর্মীর যারা সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন : তারা হলেন ১. এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী।২. খুশী কবির, সমন্বয়ক, নিজেরা করি ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী।৩. ব্যারিস্টার সারা হাসেন, বিশিষ্ট আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী। ৪. ড. স্বপন আদনান, প্রখ্যাত গবেষক, ৫. ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, প্রখ্যাত গবেষক, ৬. ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রখ্যাত গবেষক, ৭. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি এবং ৮. ড. বীণা ডি’কস্টা, প্রফেসর, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব অস্ট্রেলিয়া।