শনিবার | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

এখনো শরীফের বাড়ীতে কান্না থামেনি

প্রকাশঃ ১৩ জুন, ২০১৮ ০৫:৪৫:৩৯ | আপডেটঃ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:০৫:১০  |  ৮৬১
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ১২ জুন পরীক্ষা শেষে মাকে ফোন করে জানিয়েছিল কালই (১৩জুন২০১৭ইং) বাড়ি ফিরবে। কাপড় চোপড় ব্যাগে আগেই গুছিয়ে রেখেছিলেন। মা  ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করে রেখেছিল। কিন্তু সেসব আর খাওয়া হয়নি শরীফের। পরদিন ঠিকই বাড়ি ফিরলেন কিন্তু লাশ হয়ে।
রাঙামাটি লংগদুরের গুলশাখালী এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান শরীফুল ইসলাম ছিলেন সবার ছোট। বাবা, মা ও বড় দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে, পরিবারের হাল ধরবে সে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই তা ভেঙে গেল।
রাঙামাটি সরকারি কলেজের স্নাতক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন শরীফুল ইসলাম। ভেদভেদীর নতুন পাড়ায় সিএনজি চালক নবী ড্রাইভারের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকত সে। ১৩জুন ঘটনার দিন সেহেরি খেয়ে  নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ভোরে লংগদু উপজেলার গুলাশাখালীতে নিজ বাড়িতে যাওয়ার কথা। ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ির অন্য ৬ সদস্যর সাথে মাটি চাপা পড়ে শরীফ।
জানা গেছে, শরীফরা ৫ভাই ২ বোন, এর আগে শরীফের দুই ভাই মারা গেছেন। তার বড় ভাই শহীদ বিষ পানে আত্মহত্যা করেন,  আরেক ভাই জুলহাস ১৪-১৫ বছর আগে পাহাড়ে গাছ কাটতে গিয়ে গাছচাপা পড়ে নিহত হয়।  আর শরীফের মৃত্যু হয় মাটি চাপায়। একে একে তিন ছেলের অকাল মৃত্যুতে শরীফের বাবা সৈয়দ আলী ও তার মা শোকে  পাথর হয়ে গেছেন।
শরীফের মা’র সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বার বার চিৎকারে করে কেঁদে উঠছেন আর বলছেন, আমার আদরের ধন নাই আমি ‘কি নিয়ে বাঁচবো। এখনো ছেলে হারানোর শোক ভুলতে পারেননি, বাবা মা।

শরীফ বিয়ে করেছিল তার  স্ত্রীর নাম রেহেনা বেগম ও তাদের রওশন আহম্মদ নামে ১৭ মাসের একটি ছেলে রয়েছে। বাবা বলে ডাক দেয়ার আগেই  বাবা মারা গেছে।
শরীফুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন, আর কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। ছেলেকে কি করে মানুষ করবেন এখন এটাই তার বড় চিন্তা। সে এখন কথা বলতে শিখেছে মা মা করে ডাকছে।
শরীফুলের ভাই শফিকুল ইসলাম জানান, আমার ছোট অত্যন্ত কর্মঠ ও সবার আদরের ছিল। গত বছর মারা যাওয়ার সময় রোজা আগে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। তখন নিজ হাতে বাড়িতে বাথরুম, কুয়া, আলনা ও অন্যান্য ফার্নিচার বানান।
গুলাশাখালী রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, শরীফ অনেক ভালো ছিল, আমাদের সামনে সে বড় হয়েছে  বড়দের সালাম দিত, তার মৃত্যুর শোক এখনো এলাকাবাসী বয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিবারকে কিভাবে সান্তনা দেবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions