রবিবার | ১৯ মে, ২০২৪

করোনা আতংক পাহাড় থেকে কেড়ে নিল একটি বিজু উৎসব

প্রকাশঃ ১২ এপ্রিল, ২০২০ ১০:২৫:০২ | আপডেটঃ ১৭ মে, ২০২৪ ০৩:৪১:১০  |  ২৮০১
হিমেল চাকমা, বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক সাংগ্রাই বিজু। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অতীতের শত দুঃখ কষ্ট বেদনার মাঝেও এ উৎসব পালন করে আসছিল জাকজমক ভাবে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে করোনা ভাইরাস সংক্রামণের কারণে  পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এ উৎসব পালন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় একটি বিজু উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে  হারিয়ে গেল।
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                              
প্রতি বছর এপ্রিলের ১ম দিন থেকে সারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করে সাজ সাজ রব। সরকারী উদ্যোগে আয়োজন হয় নানান অনুষ্ঠান। পাশাপাশি নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধুলার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাহাড়ি জনপদ যেন পরিণত হয়ে উৎসবের জনপদে।

করোনার কারণে কোন ঘোষণা দেওয়া না হলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সেচ্ছায় বিজু বা বৈসাবি উৎসব পালন থেকে বিরত রয়েছে। এ সামাজিক উৎসব সাধারণত তিনদিন হলেও পুরো ১৫ দিন ধরে চলে অনুষ্ঠামালা।

চৈত্রের ২৯ তারিখে নদী ফুল ভাসিয়ে পুরণো বছরকে বিদায় জানায় পাহাড়িরা। এটিকে ফুল বিজু বলা হয়। পাহাড়িদের বিশ্বাস পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে অতীতের সব দু:খ কষ্ট গ্লানি মুছে যায়। সেজন্য এদিন ভোরে সব বয়সের মানুষ হাতে নানান ফুল নিয়ে নদীর পাড়ে হাজির হয়।  নদীর পাড়ে ফুল দিয়ে প্রার্থণা করে গত বছরের সমস্ত দু:খ কষ্ট গ্লানি মুছে যাক। নতুন বছর বয়ে আনুক সুখ শান্তি ও সম্মৃদ্ধির।

পরদিন ৩০ চৈত্র পাহাড়িদের ঘরে ঘরে চলে খানাপিনা। এদিন সবার ঘরের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়ন। প্রতিটি ঘরে রান্না করা হয় পাজন (হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না বিশেষ তরকারি)। এ পাজন বিতরণ চলে ঘরে ঘরে। গত বছরের সব মনের দুঃখ কষ্ট ভুলে মানুষে একে অপরের বাড়িতে অতিথি হয়ে যায়। এদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।

পরদিন ১ বৈশাখ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ দিন। নতুন বছরকে বরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। নতুন বছরটি যেন ভাল হয়ে যায় সেজন্য এদিন ঘরে ধর্মীয় পুরোহিত এনে নিজেদের আত্মশুদ্ধি করে নেয়।  সূত্রপাতের মাধ্যমে পুরো ঘরটিকে পবিত্র করে নেয় তারা।

এছাড়াও ঘরে বানানো ভাল খাবার দিতে এলাকার বয়োজ্যৈষ্ঠদের অতিথি করা হয় এদিন। এদিন তারা প্রার্থনা করে নতুন বছরটি যেন সুখ শান্তি বয়ে আনে।

পরদিন মারমা জনগোষ্ঠী জল উৎসবের মাধ্যমে পুরণোকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে। এসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পাহাড় পরিণত হয় উৎসবের জনপদে। কিন্তু সম্প্রতি করোনা সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। পাহাড় থেকে কেড়ে নিল একটি বিজু ।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions