রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: অনিক চাকমা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৩ লংগদুর শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার বান্দরবানে দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সাথে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় ১৬ বছর পর লংগদুতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত পরিকল্পিত সংঘাত সৃষ্টিকারী পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি পিসিসিপি'র
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। কোন ভাবেই শেষ হচ্ছে না রাঙামাটি বিএনপি’র গ্রুপিং রাজনীতি। বরং ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে এর রঙ। সবশেষ গ্রুপিংয়ে নতুন রঙ দিলেন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো। দলের একেক সময় এক এক নেতা ‘আমদানি’ ও গ্রুপিংয়ের কারণে তিনিই রাঙামাটির বিএনপি’র রাজনীতির মূল আলোচ্য ব্যক্তি। তাকেই বিএনপির গ্রুপিংয়ের ‘রাজা’ ভাবা হলেও তিনি নিজে তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, দলের কিছু ব্যক্তির ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ ও‘ সুবিধাবাদী’ রাজনীতির কারণে তাঁকে প্রতিবাদ করতে হয়।
২০০৬ সালে বিএনপি থেকে নতুন দলে যোগ দেওয়া মনিস্বপন দেওয়ানের পদত্যাগের পর সাবেক যুগ্ম জেলা জজ দীপেন দেওয়ানকে নিয়ে মাঠে হাজির হন ভূট্টো। কিছুটা বিরোধিতার মুখে দীপেন দেওয়ানকে নিয়ে এগিয়ে যান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে আইনগত জটিলতায় দীপেন মনোনয়ন না পেলেও তাঁর স্ত্রী স্কুল শিক্ষক মৈত্রী চাকমাকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন ভূট্টোরা। পরবর্তীতে রাঙামাটি জেলা বিএনপির কাউন্সিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দীপেন দেওয়ান সভাপতি নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত দীপেন-ভুট্টো সম্পর্ক ভালো ছিলো। কিন্তু ২০১১ সালে পৌর নির্বাচনের পর সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে দীপেন ও ভূট্টোর মধ্যে। যা পরবর্তীতে প্রকাশ্যে রূপ নেয়। পরবর্তীতে বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠন দীপেন-ভুট্টো দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিভক্ত এই রাজনীতিতে এবার মাঠের খেলায় উড়িয়ে আনা হয় সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব) মনীষ দেওয়ানকে। এরপর মনীষ দেওয়ান মাঠে থাকলেও সর্বশেষ জেলা বিএনপির কাউন্সিলে দীপেন দেওয়ানকে হটাতে এক হয় সকল পক্ষ।
কাউন্সিলে সভাপতির পদ হারান দীপেন দেওয়ান। দলীয় সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ভূট্টোর পছন্দের প্রার্থী শাহ আলম ও দীপন তালুকদার। ভূট্টো’র মুখে এবার তৃপ্তির হাসি। কিন্তু গ্রুপিংয়ের রাজনীতির রাজা খ্যাত ভূট্টো’র এই হাসি বেশিদিন রইলো না। নানান কারণে এবার সরাসরি গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়লেন যাদের জয়ের জন্য লড়াই করা এই মানুষটি। জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে একমত না হওয়াসহ পৌর নির্বাচনে নিজ দলের একাধিক নেতার নিষ্ক্রিয়তার কারণে আবারো গ্রুপিংয়ে জড়ালেন সাবেক এই পৌর মেয়র। এবারের মিত্র সেই পুরনো শত্রু দীপেন দেওয়ান। জেলা বিএনপির কাউন্সিলের পর দীপেন দেওয়ানের রাজনীতি অনেকটা করুণ অবস্থা চললেও সেই হালে আবারো পানি দিলেন তাঁকে সভাপতি থেকে বিতাড়িত করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করা ভূট্টো। মূলত দীপেন ও ভূট্টো এক হওয়ার মধ্য দিয়ে আবারো রাঙামাটি বিএনপির রাজনীতিতে লাগলো নতুন রঙ। এখন রাঙামাটি জেলা বিএনপির মূল অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সভাপতি শাহ আলম, সম্পাদক দীপন চাকমা দীপু আর অন্য অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট দীপেন দেওয়ান ও সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো!
এদিকে পুরনো দুই শত্রুর এক হওয়াতে অস্বস্তিতে পড়ে দুইজনের সাথে থাকা বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা। এককালে একে অন্যের ওপর বিষোদগার করলেও এখন উভয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এই দুই নেতা। দুই গ্রুপই আলাদাভাবে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শাহ আলম ও দীপন তালুকদারের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে গেলেও দীপেন দেওয়ান ও ভূট্টোর নেতৃত্বে অন্য অংশটি কলেজ গেইট এলাকায় বেশির ভাগ কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শাহ আলম বিএনপিতে কোনও গ্রুপিং নেই মন্তব্য করে বলেন, গ্রুপিং নেই, তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। ভূট্টো’র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মন্তব্য সম্পর্কে এই নেতা বলেন, ভূট্টো কখন যে কার, তা বোঝা মুশকিল। তিনি বলেন, যে ভূট্টো এক বছর আগেও দীপেন দেওয়ানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলেছেন, সেই ভূটো এখন ষড়যন্ত্র করার জন্য দীপেন দেওয়ানের সাথে এক হয়েছে। আমরা এসব বিষয় তেমন একটা আমলে নিচ্ছি না।
এ বিষয়ে সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ভূট্টো বলেন, বর্তমান বিএনপির নেতৃত্বে যারা আছে তাদের সাথে আমি ছিলাম একথা সত্য, কিন্তু তারা বেশীর ভাগই ব্যবসায়ী তারা রাজপথে আন্দোলন করে না, বরং সরকারী দলের সাথে হাত মিলিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য ঠিকাদারি করছে নিজের আখের গোছিয়ে নিচ্ছে। তারা বিএনপির জন্য অপদার্থ, অযোগ্য নেতা তাদের চেয়ে দীপেন দেওয়ান অনেক ভালো এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাথে তার যোগাযোগ অনেক ভালো এবং তিনি চেয়ারপার্সনের বিশ^স্থ একজন নেতা। তাই আমি দীপেন দেওয়ানের সাথে আবারো রাজনীতি করছি।