শনিবার | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভা

পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে জুম্ম জাতির অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে

প্রকাশঃ ০৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১০:০২:৪০ | আপডেটঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:৫৮:৫৩  |  ১৯৪০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে পাহাড়ের জুম্ম জাতির  অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি পাহাড়ে অব্যাহত ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম বেড়েছে। এ থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগুলো অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।  

ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে গত ১০ মাসে ৪০ জনের অধিক লোক খুন হয়েছে। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক। জনগণের কাছে চাঁদা আদায় করে তা দিয়ে অস্ত্র কিনে সাধারণ জনগণের দিকে সে অস্ত্র তাক করা হচ্ছে।

তাদের অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতনে সাধারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। এগুলো বিরেুদ্ধে এখনই সামাজিক আন্দোলন গতে তুলে এসব বন্ধ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কথাগুলো বলেছেন, তিন পার্বত্য(রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) জেলার বিশিষ্ট জনেরা।

শনিবার সকালে রাঙামাটি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তাঁরা। সভার সভাপতিত্ব করেন নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে এ সভা করে নাগরিক কমিটি। সভায় গৌতম দেওয়ান বলেন, বিগত সময় দুটি বছর সংঘাত বন্ধ হয়।

কিন্তু নতুন গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ দল গঠন হবার পর গত ডিসেম্বর থেকে আবার এ সংঘাত শুরু হয়। এ থেকে আজ পর্যন্ত ৪০ জনে মত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়ে অনেকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এতে করে স্বজাতির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নতুন করে আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু হতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। স্বজাতিয় হানাহানির বৃদ্ধির কারণে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ভুলন্ঠিত হয়ে পড়েছে।

যাঁরা রাজনীতির নামে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে আর এ টাকা নিয়ে সংঘাত বজায় রেখেছে তাদের চাঁদা  দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাদের সংঘাত বন্ধের আলোচনায় আসতে হবে। চলমান সংঘাত বন্ধ করতে হবে। না করলে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে।

আদিবাসী নেতা জুমলিয়ানা আমলাই বম বলেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো আর্দশ থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতা ও অর্থ নির্ভর হয়েছে পড়েছে। এ ক্ষমতা আর অর্থের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে তারা আদর্শ ভুলে গেছে। সংঘাতে জড়াচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ হয়রানী হচ্ছে। শিশু বাবা হারাচ্ছে। স্ত্রী তাঁর স্বামী হারাচ্ছে। জাতির আজ এ থেকে পরিত্রাণ চায়।
ধীমান চাকমা বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ির অবস্থা সবচেয়ে করুন। এখানে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে শহরে মানুষ খুন করা হচ্ছে। এখানে কোন মানুষ এখন নিরাপদ নয়।

অধ্যাপক মধুমঙ্গল চাকমা বলেন, রাতে দিনে গোলার আওয়াজ শুনা যায় খাগড়াছড়িতে। যেন অদ্ভুত পরিবেশ। একপক্ষ চাঁদা নির্ধারণ করে দিলে এবং তা দেওয়া হয়েছে শুনলে অপরপক্ষ তার দ্বিগুণ চাঁদা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। তা দেওয়া হয়েছে জানলে অপর আরেকটিপক্ষ তার তিনগুণ চাঁদা নির্ধারণ করে দিচ্ছে এবং তা দিতে হচ্ছে।
 


ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধি বিল্টু চাকমা বলেন, পাহাড়ে আজ যারা স্বশস্ত্র কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা কেউ সমাজ থেকে বিতারিত। কেউ মাদকাসক্ত। কেউ সাধারণ মানুষের চোখে খুনী। একদল থেকে বিতারিত হলে অন্য দলে যোগ দিচ্ছে। এদের এদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে নির্যাতন করা হচ্ছে তার আত্মীয় স্বজনদের। চাঁদা দিতে হচ্ছে।



মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অংসাইম্যা মারমা, দুই পার্বত্য জেলায় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত থাকলেও বান্দরবানে ভিন্ন। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে। এখানে অবৈধ দখল অব্যাহত আছে। মায়ানমার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের বসবাসরত আদিবাসীদের উপর অত্যাচার করে। তরুণ ও কিশোরদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কুলি হিসেবে ব্যবহার করছে। নারীদের নির্যাযতন করছে। এমনকি জোর করে বিয়েও করছে। এলাকার বাইরে থাকা ছেলে মেয়েরা নিজের বাড়িতে যেতে চাইলে আগে মায়ানমার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যায় না।

খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোধিসত্ব দেওয়ান বলেন, খাগড়াছড়ি অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। আন্দোলন তো দুরের কথা কথা বলার সাহস কেউ করে না।

সভায় অন্যাদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, সুকুমার দেওয়ান, সুর্নিমল দেওয়ান, কার্বারী প্রতিনিধি জটিল বিকাশ চাকমা, কাজল তালুকদার,  এড.সুস্মিতা চাকমা, নমিতা চাকমা, কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা, ভদ্রসেন চাকমা, ইয়াঙান ¤্রাে প্রমূখ।
সভার শুরুতে নাগরিক কমিটির বিবৃতি পাঠ করেন অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী। সভায় তিন পার্বত্য জেলায় বিশিষ্ট জনেরা অংশগ্রহণ করেন।
 
রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions