সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে তিন দিনের বৈসাবি (বৈসুক সাংগ্রাই বিজু) উৎসব। বৃহস্পতিবার সকালে নদীর ঘাটে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে সূচিত হয় উৎসবটির। কাল থেকে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়িদের ঘরে ঘরে শুরু হবে আপ্যায়ন। শেষ হবে শনিবার।
সকাল সাড়ে ৬টায় রাঙামাটি রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল ভাসানো হয়েছে উদযাপন কমিটির উদ্যোগে। এতে অংশ নেন কমিটির আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার, ইন্দু লাল, বিজয় কেতন চাকমাসহ সামাজিক, সুশীল সমাজ, প্রথাগত ও স্থানীয় নেতা, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ পাহাড়ি নারী-পুরুষ।
এরপর সকাল ৯টায় শহরের গর্জনতলীতে ফুল ভাসায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার। এছাড়া রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এরপর নৌকাবাইচ, বয়োজৈষ্ঠদের স্নান করানো, বস্ত্রদান, আলোচনা সভা, ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য ও পিঠা আপ্যায়ন করা হয়।
সকাল ১১টায় শহরের রিজার্ভমুখ উন্নয়ন বোর্ডের ঘাটে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্ট গওহর রিজভী। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমাসহ সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। পরে উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফুলবিজু’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
আদিবাসীদের সামাজিক উৎসবকে ত্রিপুরা বলে বৈসুক, মারমা বলে সাংগ্রাই, চাকমারা বলে বিজু, অন্যান্য আদিবাসীরা কেউবা বিষু, কেউবা বিসু, বিহু বলে। সব মিলিয়ে এই উৎসবকে এক ভাষায় একে বলা হয় বৈসাবী। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে এখনো মূখরিত পাহাড়ি জনপদ। মূলতঃ আজ ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে এই উৎসব শুাং হয়েছে। আজ ফুল বিজু শুক্রবার মুল বিজু এবং গোজ্যাপোজ্যার দিন। ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ উৎসব আরো কয়দিন থাকবে। উৎসবকে সামনে রেখে শহরাঞ্চল থেকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল পর্যনমশ সর্বত্র পাহাড়িদের ঘরে ঘরে সাধ্যমত উৎসবের আয়োজন চলে । কাল মুল বিজুর দিন আদিবাসীদের ঘরে ঘরে অতিথিদের জন্য পরিবেশন হবে নানান ধরণের খাবার। রান্না হবে হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি। আজ সকালে দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পাহাড়ী নারীরা ঘরা বাড়ীর পরিস্কার করে এবং গাছ থেকে পাতা এবং ফুল এনে ঘর সাজায়। ঘর সাজানো হলে নদীর ঘাটে গিয়ে গোসল করে ফুল ভাসায় এবং মুরব্বীদের কাছ থেকে আর্শীবাদ নেয় এবং তাদের নতুন কাপড় চোপর দেয়। কাল মুল বিজুদিন অতিথিদের আপ্যায়ন করে।
বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ীরা পুরানো বছরকে বিদায় জানায় আর নতুন বছরকে বরন করে নেয়। সবার কামনা থাকে পুরানো বছরের গ্লানি,র্ব্যথতা,হিংসা,বিদ্বেষ মুছে যাক নতুন বছর ভালোবাসা, সাফল্য আর সম্প্রীতির হোক।
আগামী ১৮ এপ্রিল রাঙামাটির নারিকেল বাগান এলাকায় মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা মাসসের জল উৎসবের মাধ্যমে সমাপ্ত ঘটবে বৈসাবি আয়োজনের।