দেশের সবচেয়ে বড় সিংহ শয্যা বুদ্ধমূর্তি রাঙামাটির জুরাছড়িতে
প্রকাশঃ ০৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৪:১২:২৯
| আপডেটঃ ২৭ জুলাই, ২০২৪ ০৯:৫৬:৩৩
|
![](https://www.chttoday.com/public/images/icons/view_icon_image.png)
২২৫৮
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, জুরাছড়ি থেকে ফিরে। দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি স্থাপিত হয়েছে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির জুরাছড়িতে। উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের সুবলং শাখা বনবিহারে ১২৬ ফুট দীর্ঘতম 'সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি'টি নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো ধরণের সরকারি সহায়তা ছাড়াই দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকাদের দানের অর্থেই প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটি সাধারণ মানুষ পরিদর্শনে উন্মুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিহার কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পরমপূজ্য বনভন্তের স্মৃতি স্মারক হিসেবে জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ ও এ উপজেলা হতে ভিক্ষুহওয়া ভিক্ষুগণ (বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু) দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও দীর্ঘতম সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেন ২০১২ সালে। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রæয়ারিতে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২১ সালের শেষ দিকে এসে নির্মাণকাজ শেয় হয়। বুদ্ধমূর্তির স্থপতি ছিলেন বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, প্রতিপদ দেওয়ান ও দয়াল চন্দ্র চাকমা। প্রকৌশলী ছিলেন তৃপ্তি শংকর চাকমা ও অঙ্কনের দায়িত্বে ছিলেন বিমলানন্দ স্থবির।
বিহার সংশ্লিষ্টরা জানান, সাড়ে ১২ একর জায়গাজুড়ে গঠিত জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বনবিহার। বিহারে নির্মিত বুদ্ধমূর্তির নিরাপত্তা প্রত্যহ বিহারের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও বিহারের আশপাশের এলাকা ক্লোজডসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটি বিহারে নির্মিত হলেও সাধারণ জনসাধারণের জন্য এটি পরিদর্শন উন্মুক্ত থাকবে।
সুবলং শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলার প্রবীণ নাগরিক ধল কুমার চাকমা (৮৪) জানিয়েছেন, ‘শ্রদ্ধেয় বনভন্তের স্মৃতির স্মরণে জুরাছড়ি উপজেলা থেকে যারা ভিক্ষু হয়েছেন; তারা সকলে ভাবনা-চিন্তা করেছেন এখানে বড় একটা বুদ্ধমূর্তি করা যায় কিনা। যেহেতু এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অর্থ জনবল দরকার দরকার তখন স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে শ্রদ্ধেয় ভিক্ষুগণ আলাপ-আলোচনা করেন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে বিশাল বৈঠক হয়। বৈঠকে আমরা সকলেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, বনতন্তের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি বড় বুদ্ধমূর্তি করা যায়।’
জুরাছড়ির প্রবীণ এই বাসিন্দা আরও জানান, ‘প্রথম দিকে জুরাছড়ির হাজার হাজার মানুষ দূর-দুরান্তের ঝিরি থেকে পাথর এনে শ্রম দিয়েছেন। এরপর স্থানীয়ভাবে অর্থ উত্তোলন শুরু হয়। আমাদের এই কাজে আমরা সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করেনি। ধর্মপ্রাণ মানুষের দেয়া অর্থেই এই কাজটি করা হয়েছে। জুরাছড়ির মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত উপাসক-উপাসিকা, দায়ক-দায়িকাগণ বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সকলের আন্তরিকতায় আমরা ১২৬ ফুট দীর্ঘতম বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে সক্ষম হয়েছি। বুদ্ধমূর্তি নির্মাণসহ পুরো কাজে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।’
এদিকে, স্থানীয় সাংবাদিক স্মৃতিবিন্দু চাকমা বলেন, জুরাছড়ি রাঙামাটির একটি প্রত্যন্ত উপজেলা। এখানকার জনসংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ হয়েছে কেবল জুরাছড়ির মানুষের উদ্যোগেই। বুদ্ধমূর্তিটির জন্য দেশ-বিদেশে জুরাছড়ির নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের অনেক বিষয়। দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তিটি জুরাছড়ি উপজেলায় হওয়ার সুবাধে এখানকার অর্থনীতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয় এই সাংবাদিক।
জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, ‘জুরাছড়ির সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তিটি দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। সরকারি কোনো সহযোগিতা ছাড়াই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার যারা বাসিন্দা আছেন তারা এটি নির্মাণে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ বিশিষ্টজনেরা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। জুরাছড়ির মানুষ শ্রদ্ধেয় বনভন্তের স্মৃতি স্মরণেই এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করেছেন।’