শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

খাগড়াছড়িতে উজাড় হচ্ছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল

প্রকাশঃ ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ০৬:১৪:০১ | আপডেটঃ ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০১:২৫:১০  |  ৮৮৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি ॥ খাগড়াছড়িতে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে অশ্রেনীভুক্ত বনের গাছ। পার্বত্য এলাকায় সংরক্ষিত বন,রক্ষিত বন ,ব্যক্তিমালিকাধীন বন ও অশ্রেণীভুক্তসহ চার ধরনে বন রয়েছে। তবে বেশীর ভাগই অশ্রেণীভুক্ত বনের আওতাভুক্ত। তবে গত কয়েক দশকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও অশ্রেনীভুক্ত বনাঞ্চল ব্যাপক হারে উজাড় হয়েছে। বনখেকোদের দৌরাত্ম্যে এসবে বনের কাঠ নির্বিচারে কাটা হচ্ছে।  দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে তেমন নজরদারি নেই।  পাহাড় থেকে পরিবহন করে সেসব কাঠ নেয়া হয় ইটভাটা,সমিলসহ বিভিন্ন জায়গা। এভাবে ধ্বংস হচ্ছে সবুজ পাহাড়।

সাম্প্রতিককালে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উপর বন বিভাগের উপর নজরদারি বাড়লেও একেবারেই অরক্ষিত অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল। এসব বনাঞ্চল নিয়ে এখনো কোন জরিপ হয়নি। সাধারণত খাস পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে যে বনাঞ্চল গড়ে তা অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চলের আওতাভুক্ত। এসব বন থেকে নির্বিচারে গাছ কেটে নিচ্ছে বন খেকোরা। সাধারণত পার্বত্য এলাকায় গাছ কাটতে হলে সরকারিভাবে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নজরদারি ও তদারকির অভাবে বিনা অনুমতিতে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনখেকোরা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বনাঞ্চল উজাড়ের তথ্য। প্রতিদিন খাগড়াছড়ি বিভিন্ন অশ্রেণিভুক্ত বন উজাড় হচ্ছে ১৬ হাজার ৫শ মণ গাছ। যা ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে বন ধ্বংসের পেছনে ইটভাটা মালিকদের ইন্ধন রয়েছে। একশ্রেণির দালাল চক্রের মাধ্যমে তারা বন উজাড় করছে।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সীমানাপাড়া এলাকা। পাড়া থেকে প্রায়  এক ঘন্টা হাঁটার পর বন খেকোদের দেখা মিলল। যেতে যেতে চোখে পড়ে বনের গাছ পরিবহন করার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ের রাস্তা ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।  গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত আলোক বিকাশ চাকমা,রতন বিকাশ চাকমাসহ একাধিক শ্রমিক জানান,‘এসব পাহাড় খাস হলেও স্থানীয়রা এর মালিকানা ভোগ করে। তারা পাহাড়ের গাছ চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করে। ইটভাটায় গাছ সরবরাহকারী দালালরা(মাঝি) স্থানীয়দের কাছ থেকে পাহাড়ের গাছ কিনে নেয়। তারপর সেসব গাছ নির্বিচারে কাটা। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত প্রতিটি শ্রমিকের মজুরী ৩শ টাকা। ’ শ্রমিকেরা আরো জানায়,  বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে পুরোটায় একাজ করে তারা। সীমানা পাড়া এলাকায় একসাথে গাছ কাটার সাথে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ২০ জন শ্রমিক। গাছ কর্তন থেকে পরিবহন করে তারা। সারাদিনে অন্তত ৫শ মণ গাছ কর্তন করে তারা। ’  তারা জানান ,‘ শ্রুতিরঞ্জন নামে একজন দালাল ৫০ হাজার টাকায় এই পাহাড়ের সব গাছ কিনেছে। তার নির্দেশে এসব গাছ কর্তন চলছে।’  যে পাহাড় থেকে গাছ  কর্তন করা হয়েছে সেখানে শ্রুতিরঞ্জন ত্রিপুরাকে পাওয়া গেলেও  তিনি  গাছ কাটার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বাকীর করে।

বন ধ্বংস হওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পশু পাখির আশ্রয়স্তল । বিনষ্ট হচ্ছে জীবজগত। গাছ মাটি নির্মল রাখে,পানির উৎস সতেজ রাখে এবং মাটির ক্ষয় রোধ করে। দুর্গম পাহাড় থেকে সহজে গাছ পরিবহনের জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা বানায় বনখেকোরা।  বনের গাছ কর্তন রোধে কঠোর পদক্ষেপ চাই পরিবেশ কর্মীরা। পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান,‘ অনুমতি ছাড়া অশ্রেণীভুক্ত বনের গাছ কাটার কোন নিয়ম নেই।  কিন্ত খাগড়াছড়িতে নির্বিচারে বন কর্তন হয়।  কোন বাধা ছাড়া বন উছাড় হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সবুজ পাহাড় বলতে আর কিছু থাকবে না।’

বনের গাছ কাটা বন্ধে টাস্কফোর্স করে অভিযান জোরদার করার দাবি জানান খাগড়াছড়ির  বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার জামান  জানান,‘ অশ্রেনীভুক্ত বনাঞ্চল মূলত জেলা প্রশাসকের আওতাধীন। বিনা অনুমতিতে এসব বন থেকে গাছ কর্তনের সুযোগ নেই। তবে  অবৈধভাবে কেউ বনজ দ্রব্য পরিবহন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার বন বিভাগের রয়েছে। বনবিভাগ অভিযান জোরদার করবে। ’

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions