শনিবার | ২০ এপ্রিল, ২০২৪

নানিয়ারচরে অপহৃত ১৮ গ্রামবাসীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন পালিত, কাল অবরোধ

প্রকাশঃ ০৯ জুলাই, ২০১৮ ০৭:৫৮:০৭ | আপডেটঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৪৯:৪৮  |  ৭৯০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির নানিয়ারচরে অপহৃত ১৮ গ্রামবাসীর অক্ষত অবস্থায় মুক্তির দাবিতে সোমবার সকালে একযোগে উপজেলার তিন স্থানে পুলিশসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর কঠোর প্রহরার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা। দাবিটি নিয়ে কাল (মঙ্গলবার) নানিয়ারচর উপজেলায় সড়ক ও নৌপথে অবরোধের ডাক দিয়েছে উদ্বিগ্ন নানিয়ারচরবাসী।  
রোববার রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ও নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামপ্রধানসহ ১৬ জন এবং ৪ জুলাই নানিয়ারচর বাজার থেকে ২ জনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। জানা যায়, রোববার সকালে ইঞ্জিনবোটযোগে স্থানীয় হাটে যাওয়ার পথে নানিয়ারচরের বুড়িঘাট ইউনিয়নের কেরেটছড়ি হাতিমারা এলাকায় বোট থামিয়ে অস্ত্রের মুখে ১৬ গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায় এদকল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এ সময় ২৫ জনকে বোট থেকে নামানোর পর বাছাই করে ১৬ জনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এদিকে অপহৃতদের মুক্তির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানান, স্থানীয়রা। এর আগে ৪ জুলাই নানিয়ারচর বাজার হতে ২ গ্রামবাসীকে অপহরণ করা হয়। এ দু’জনের মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানায়, তাদের পরিবার। এসব অপহরণের জন্য জেএসএস (সংস্কারপন্থী) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। অপরপক্ষে অভিযোগ অস্বীকার করছে ঐ দুটি পক্ষ।
অবিলম্বে অপহৃত নিরীহ ১৮ গ্রামবাসীর সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার সড়ক ও নৌপথে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ দিয়েছে এলাকার জনসাধারণ। দাবিটি নিয়ে ‘নানিয়ারচরবাসী’ ব্যানারে উপজেলার ঘিলাছড়িবাজার, ভুয়ো আদাম ও জুরাছড়িতে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন পুলিশসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা। ঘিলাছড়ি বাজারে প্রথমে পুলিশ বাধা দিতে গেলে পরে তা উপেক্ষা করে আইনশৃংখলাবাহিনীর কঠোর প্রহরার মধ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে অপহৃতদের উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, স্থানীয় জনগণ। তারা বলেন, আগামী ২৫ জুলাইয়ের নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে একের পর এক নিরীহ গ্রামবাসীদের অপহরণ করছে সন্ত্রাসীরা।
ঘিলাছড়ি বাজারে পালিত মানববন্ধনে ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য শান্ত্বনা চাকমা, বুড়িঘাট ইউনিয়নের সাবেক নারী সদস্য কাজলী ত্রিপুরা ও স্থানীয় নারীনেত্রী শান্তিপ্রভা চাকমাসহ অন্যরা নেতৃত্ব দেন।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য শান্ত্বনা চাকমা বলেন, মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়ে একের পর এক নিরীহ গ্রামবাসীদের অপহরণ করছে সন্ত্রাসীরা। অথচ অপহৃতদের উদ্ধারের পরিবর্তে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে সরকারের প্রশাসন।
অবিলম্বে অপহৃতদের উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান, এ নারী ইউপি সদস্য।  
অন্যদিকে নানিয়ারচর থানা পুলিশ বলছে, অপহরণের বিষয়ে কোনো রকম মামলা বা অভিযোগ নেই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ এসব কথা বলেছেন।

এদিকে রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের হাতিমারা মুখ এলাকা থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গ্রাম প্রধানসহ ১৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে সংস্কারবাদী জেএসএস ও নব্য মুখোশাহিনী অপহরণ করেছে উল্লেখ করে তার প্রতিবাদ এবং অপহৃতদের মুক্তির দাবিতে কাল মঙ্গলবার  নানিারচর উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছে নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি।
নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব পরাণধন চাকমা সাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ অপহরণ ঘটনায় ‘নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটি’র আহ্বায়ক জ্যোতি লাল চাকমা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নব্য মুখোশ বাহিনী ও সংস্কারবাদী জেএসএস-এর হাতে গোটা নানিয়াচরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে। দিন দুপুরে গণহারে ১৬ জন গ্রামবাসীকে অপহরণের পরও প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা নান্যাচর সদরে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবস্থান করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি অপহরণের প্রতিবাদে ঘোষিত মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে এলাকাবাসীর কাছে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions