শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

কাল খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামীলীগের সভা: চমক দেখতে চান নেতাকর্মীরা

প্রকাশঃ ০৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৫:২৬:৪৩ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০২:১৩:৪৯  |  ১৪৭২
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ে  শনিবার (৫ ডিসেম্বর) নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সভা ডেকেছে আওয়ামীলীগ। গঠনতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের এই ফোরামটিই যাচাই-বাছাইয়ের পর দলের মনোনয়ন পাবার যোগ্য এমন প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠান। এবং সে তালিকার বাইরে থেকে টপকে ‘নৌকা’ পাবার নজির খুব একটা নেই। খাগড়াছড়ি পৌরসভার দুইবারের নির্বাচিত স্বতন্ত্র মেয়র রফিকুল আলম, এবারও নির্বাচন করতে চান। শুধু তাই নয়, তিনি এবার জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য হবার সুবাদে খোদ ‘নৌকা’র প্রার্থী হতেই বেশি আগ্রহী। যদিও আগেরবারের নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীককে অগ্রাহ্য করেছিলেন। এবার বেশ আগেভাগেই তিনি দলের প্রার্থী হতে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র বাসায় বড়-ছোট দুই ভাইকে নিয়ে দাবি জানিয়ে এসেছেন।

এই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য একজন যোগ্য প্রার্থী বাছাই এবং বিজয়ী করার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দলটির বড়ো অংশ।

দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, স্বতন্ত্র মেয়র রফিকুল আলম সমর্থকদের হাতে দলের এমপি থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র নেতা অপমান-অপদস্ত হয়েছেন। হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। এসব কারণে এবার আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে অবশ্যই বিজয়ী করার ব্যাপারে সজাগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে চমক আসার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন তারা। সে হিশেবে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী হতে পারেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। দল ও দলের বাইরে একজন সজ্জন ও ন¤্র নেতা হিশেবে তাঁর দারুণ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে অতটা মরিয়া না হলেও তাঁর প্রার্থীতার গুঞ্জনে পুরো জেলার নেতাকর্মীদের মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তিনি প্রার্থী হতে না চাইলে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা বিশিষ্ট আইনজীবি নাসির উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করানোর ব্যাপারেও সক্রিয় দলের নীতিনির্ধারকরা। এডভোকেট নাসির মানুষ হিশেবে নিরহংকারী ও নাগরিক আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক হিশেবে পরিচিত। এই দুইজনের একজন প্রার্থী হলে বিজয়ী হওয়া সহজ হবে। এছাড়া মেয়র পদে সরকারি দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরার ছেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি বিশ^জিৎ রায় দাশ এবং পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ হোসেন।

অপরদিকে বর্তমানে স্বতন্ত্র মেয়র রফিকুল আলম আবারও প্রার্থী হবার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই মেয়রকে জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সদস্য করায় হিসেব নিকেশ কিছুটা ব্যত্যয় ঘটতে পারে। তবে বিগত দুই পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অবস্থান করায় তাঁকে নিয়ে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে বিরোধিতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী করা হবে কিনা সংশয় দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় প্রথম শ্রেণী (বিশেষ) মর্যাদার পৌর মেয়রের লোভনীয় পদটি ধরে রাখতে মরিয়া খাগড়াছড়ি’র প্রভাবশালী ‘আলম’ পরিবার। দলের নীতি-নির্ধারকদের কাছে যদি শেষতক মেয়র রফিক সায় না পান তাহলে কী হবে, সেটি এখনো পরিস্কার নয়। তবে তাঁকে ছাড়া অন্য যে কাউকেই মেয়র পদে দলের প্রার্থী হিশেবে দেখতে চান, দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল।
এ প্রতিবেদক সবস্তরের নেতাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন, মেয়র রফিক তৃতীয়বারেরমাথায় যদি দলের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন, তাহলে তাঁর লাগাম টানা যেমন কঠিন হবে তেমনি দলেও অতীতের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে একটি মেয়র রফিকের চেয়ে তাঁর ছোটভাই মো: দিদারুল আলমকেই উপযুক্ত মনে করছেন। জেলা আওয়ামীলীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক একসময় জেলা ছাত্রলীগের সা: সম্পাদক হিশেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের কাছে মেয়র রফিকের চেয়ে মো: দিদারুল আলম অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছেন বলেই মনে হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ হোসেন বলেন, যে বা যাঁদের নেতৃত্বে দলের এমপি থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মী পর্যন্ত হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাঁদের কাছে দলের মেয়র পদ তুলে দিলে পরিণতি যা হবার তাই হবে।

জেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল; তাঁরা কেউই মুখ খুলে প্রার্থীতার জানান দেননি। তাঁরা বলছেন, নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ ইচ্ছের কারণে হয়তো মনোনয়ন চাইতে পারেন তবে দলের সিদ্ধান্তকইে স্বাগত জানাবেন। তবে পৌর এলাকার ছাত্র-যুবদের মাঝে কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠা পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল মনে করেন, এমন প্রার্থীই জয়ী হয়ে আসুক, যিনি অসাম্প্রদায়িক এবং দলীয় শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হবেন না।

দলে আলোচিত-সমালোচিত ‘আলম’ পরিবারের সন্তান মো: দিদারুল আলম বলেন, বড়ো দলে নানা কারণে মতবিরোধ হতে পারে। দিনশেষে আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই জননেতা ও সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র হাতকে শক্তিশালী করতে পারবো। আর মনোনয় না পেলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবো না।

টানা দুই মেয়াদের সমালোচিত-প্রশংসিত মেয়র মো: রফিকুল আলম ‘নৌকা’ প্রতীক পাবার আগ্রহের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সকলকে নিয়েই এগোতে চাই। অতীতের ভুলভ্রান্তি পেছনে ফেলে সমৃদ্ধ খাগড়াছড়ি পৌর এলাকা গড়তে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মানিত নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছি।

জেলা আওয়ামীলীগের সা: সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগ অনেক বেশি সংঘঠিক-ঐক্যবদ্ধ। জননেতা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র দূরদর্শী-অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বের কারণে খাগড়াছড়ি পৌরসভাসহ পুরো জেলায় দৃশ্যমান বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কাল (শনিবার) খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্ধারণে গঠনতান্ত্রিক সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions