শুক্রবার | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
মাটিরাঙ্গা উপজেলায়

পাহাড়ি ঢলে সেতুর ধ্বস, কৃষি নির্ভর ১৫ গ্রামের মানুষের জীবনে অচলাবস্থা

প্রকাশঃ ১৯ জুন, ২০১৮ ০৩:৪৬:৫১ | আপডেটঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০৮:০২:২৮  |  ৮৫৬
সিএইচটি টুডে ডট কম,, খাগড়াছড়ি। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১০ নং যৌথ খামার এলাকায় ধলিয়া খালের উপর নির্মিত সেতুটির মাঝখানের অংশটি ধ্বসে যাওয়ায় তিন মৌজার ১৫ গ্রামের মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অত্যন্ত দূর্গম ও দারিদ্র্যপ্রবণ এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের জীবনে এরই মধ্যে নেমে এসেছে অচলাবস্থা।
গেলো সপ্তাহে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মতো খাগড়াছড়িতেও টানা বর্ষণে নজিরবিহীন ঢলের সৃষ্টি হয়। সেসময় গত মঙ্গলবার (১২ জুন) বিকেলে সেতুটি ধ্বসে পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এতে মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নের তিনটি মৌজা, দুইটি ওয়ার্ডের ১৫টির অধিক গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন এই সেতু দিয়েই এই এলাকার কৃষি-জুম ও বন নির্ভর তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতেও পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১০ নম্বর এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের সাথে ধলধলি, আলুটিলা ও তৈকাথাং মৌজার সংযোগ ঘটাতে ২০০১ সালে পার্বত্য জেলা পরিষদ ধল্যা খালের ওপর একটি জীপেবল সেতু নির্মাণ করে দেয়। সেতুটি নির্মাণ করায় গত দেড়যুগে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
এলাকার লোকজন জানান, একটি পিলারের তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সেই পিলারটি সহ সেতুটি ধসে পড়েছে। তারা অভিযোগ করেন, সেতু নির্মাণের সময় পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকার কারণে সেতুটির ধস হয়। যে পিলারটির তলদেশ থেকে মাটি সরে যায়, সেটি খালের মাঝ বরাবর ছিল। একদিকে পানির প্রবল স্রোত, সেই সাথে ভেসে আসা কলাগাছ, আগাছা পিলারটিতে আটকে যায়।
সেতু ধসের পর এলাকাবাসী কলাগাছের ভেলা তৈরী করে খালটি পার হচ্ছে। এ ছাড়াও এলাকাবাসীর উদ্যোগে একটি অস্থায়ী সাকোঁ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল বীরেন্দ্র কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা দীন মোহন কার্বারী বলেন, সামনে বর্ষাতে সব সময় ধলিয়া খালে ৩০ থেকে ৪০ ফুট উচ্চতায় পানি থাকবে। এখানকার দুটি স্কুলের অনেক শিশু এবং শিক্ষকের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ হয়ে যাবার শংকা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের নিত্য প্রয়োজন এবং চিকিৎসার জন্য চলাচলও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠেছে।
সেতু’র পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসা করে আসছেন মৌজা প্রধান দয়া মোহন ত্রিপুরা। তিনি জানান, পুরো এলাকার জীবন নির্বাহ এবং জীবন বাঁচানোর জন্য এই সেতুটি এলাকাবাসীর জন্য অপরিহার্য্য। এই সেতুর অভাবে এখানকার উৎপাদিত ফলমূল, শাক-সবজি, গবাদিপশু এবং গাছ-বাঁশ; সবকিছু মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। সামনে পুরো বর্ষাকাল পড়ে রয়েছে। দ্রুত সেতুটি মেরামত, পূন:নির্মাণ বা অস্থায়ী ভিত্তিতে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না করলে এলাকার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য অমৃত ত্রিপুরা জানান, এই সেতুটি ধসের কারণে ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষের জীবিকার ওপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। এলাকার অধিকাংশই কৃষি কাজ ও জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। এই এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিন ট্রাক কলা ও অন্যান্য ফলমুল ও সবজী উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করা হয়। এসবই সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা হতো। এখন সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকার মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে পড়বে। সেতু ধসে পড়ার বিষয়টি উপজেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে জানানো হয়েছে।
এলাকাবাসী সেতুটি পুন:নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই সাথে এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে দ্রুত অস্থায়ী সাকোঁর ব্যবস্থা করতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেছেন।
এলাকাবাসীর আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্দশা ও এলাকার মানুষের জীবিকার কথা বিবেচনা করে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এ ছাড়াও এলাকার মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ধসের পড়া সেতুর পাশে জরুরীভিত্তিতে একটি অস্থায়ী সাকোঁ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, তিনি জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতু ধ্বসের বিষয়টি জেনেছেন। অত্যন্ত দূর্গম ও দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকাটি তিনি এরমিধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। সেতুটির নির্মাণ কর্তৃপক্ষ পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং মানুষের দূর্দশার কথা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বরাদ্দ পাওয়া গেলে আপাতত: অস্থায়ীভাবে যতোদিন সেতু নির্মিত না হয়, ততোদিন নূন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু’র উদ্যোগ নেয়া হবে।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions