শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪
প্রশাসন বলছে অভিযোগ পেলে শাস্তি

খাগড়াছড়িতে এখনও অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়

প্রকাশঃ ১৩ জুন, ২০১৮ ০৫:৩৮:০০ | আপডেটঃ ১৬ মার্চ, ২০২৪ ০৪:০৮:৫৭  |  ৯২৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড় ধসের একবছর আজ(১৩ জুন)। প্রতিবছর বর্ষায় সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট বড় ধসের ঘটনা ঘটলেও ২০১৭ সালের ১৩ জুনের ঘটনা ছিল ভয়াবহ। এরআগে পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগে এতো হতাহতের ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটেনি। সে সময় পাহাড় ধসে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১৩৮জন  নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক ব্যাক্তি। এবং আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয় কয়েক হাজার পরিবার।
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের অনেক পয়েন্টে সড়কের মাটি সরে গিয়ে রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কে ৩৩দিন, এবং রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কে ৬৮ দিন পর যান চলাচল শুরু হয়। এতো বড় প্রাকৃতিক দূর্যোগের রেশ কাটতে না কাটতে আবারও পাহাড় কাটার ধুম লেগেছে খাগড়াছড়িতে। পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ ও ইটভাটার মাটির যোগান দিচ্ছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। এতো বড় দূর্যোগের পরও স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর কোন অবস্থান না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সচেতনমহল।  
খাগড়াছড়িতে গতবছরের জুন মাসে ভয়াবহ পাহাড় ধসে নারী ও শিশুসহ ৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়ির প্রাণকৃত্য চাকমার ছেলে পরিমল চাকমা, বড়ইতলী এলাকার পতুল্যা চাকমার স্ত্রী কালেন্দ্রী চাকমা(৪৫) ও দেবব্রত চাকমার মেয়ে নিপুন চাকমা(৫)। এছাড়া রামগড়ের পাতাছড়া এলাকায় বাড়ির উপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে মো: নুরুন্নবী(১৪) ও মোহাম্মদ হোসেন(১০) নিহত হয়। তারা উভয়ই পাতাছড়া এলাকার মো: মোস্তফার ছেলে। এছাড়া খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও মানিকছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।  
পাহাড় ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনার রেশ না কাটার আগেই ২০১৭ সালের অক্টোবরে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের চৌংড়াছড়ি এলাকায় রাস্তার পাশের পাহাড় কেটে মাটি না হয় ইটভাটায়। মানিকছড়ি, রামগড় ও দীঘিনালা উপজেলার ইটভাটাগুলো ইট বানাতে মাটি নেয় পাহাড় কেটে। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা সদরের শালবন, কুমিল্লাটিলা, ইসলামপুর, ভুয়াছড়ি, কমলছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেদারসে পাহাড় কাটা চলছেই।  

বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে, পাহাড় ধসের পেছনে বন উজাড়, বৃক্ষ নিধন, অতিবৃষ্টি, জুমচাষ, পাহাড়ী ছড়া ও ঝিরি থেকে অবাদে বালু ও পাথর উত্তোলন দায়ি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে পাহাড় কাটার উপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্তেও পাহাড় কাটা থামছে না। এজন্য পরিবেশবাদীরা প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ি করলেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণে কাজ চলছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবাদে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন চলছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ বিরোধী কার্যক্রম বন্ধ না হলে আরও প্রকৃতি গতবারের চেয়ে আরও ভয়াবহ প্রতিশোধ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।  

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটার মতো অপরাধে প্রশাসনের জিরো ট্রলারেন্স। অভিযোগ পাওয়া মাত্র মোবাইল কোর্ট করে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতি দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। এছাড়া দূর্যোগকালীন সময়ের আগে পূর্ববর্তী প্রস্তুতির জন্য যা যা করণীয় তার সবই গ্রহণ করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions