বৃহস্পতিবার | ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিএনজি ও থ্রি হুইলারে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি, জিম্মি সাজেকগামী হাজার হাজার পর্যটক

প্রকাশঃ ২৯ জানুয়ারী, ২০২০ ০৬:১৯:৩৫ | আপডেটঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০৩:২৪:৫১  |  ১১১৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই চলছে শত শত সিএনজি ও থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র। এর ফলে একদিকে সড়কে দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সামনেই এসব গাড়ি চলাচল করলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  জেলার ৯টি উপজেলা, আন্ত: উপজেলা সড়কের পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে সড়কে ৫ হাজারের সিএনজি ও মাহিন্দ্র চলাচল করছে। কিন্তু পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় নিবন্ধিত সিএনজি ও থ্রি হুইলারের সংখ্যা মাত্র ৩৫০টি।

প্রতিদিন স্থানীয় লোকজনসহ পর্যটক পরিবহনে ব্যবহার হওয়া এসব গাড়ি বৈধ না চোরাই-সেই হিসাবও নেই স্থানীয় বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, পুলিশ ও প্রশাসনের কাছেও। যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায়, সড়কে দুর্ঘটনা অথবা নানা বেআইনি কার্যক্রমে এসব পরিবহন ব্যবহার হলেও নেই আইনানুগ ব্যবস্থা। ভুক্তভোগীদের নানা অভিযোগ থাকলেও নেই প্রতিকার। রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি ও থ্রি হুইলারের চালক-মালিকরা জানান, মাসিক ভিত্তিতে পুলিশী টোকেনের বদৌলতে এসব গাড়ি চলছে। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করছে।

জেলার  মাটিরাঙা সদরের আবু হালিম জানান, কিছু দিন আগে তিনি সিএনজি দুর্ঘটনায় পড়েছেন। থানায় মামলায় করতে গেলে থানা গাড়ি নাম্বার না থাকার অজুহাতে মামলা নেননি। এ ধরনের ঘটনা আর অভিযোগ যেনো খাগড়াছড়িতে অনেকটা নিয়মেই পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গাড়ির যদি রেজিস্ট্রেশান নাম্বার না থাকে, তাহলে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। সব হালকা যানবাহন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাজেক ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন কয়েক’শ পর্যটক খাগড়াছড়ি আসেন। এসব পর্যটকের মধ্যে নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং ছোট পরিবারের মানুষরা ব্যয় সংকোচনের জন্য সিএনজি এবং থ্রি হুইলারের উপরই ভরসা করেন। কিন্তু এসব যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত-লাগামহীন ভাড়ার বিষয়ে কেউ-ই দায় নেন না। এমন অভিযোগ অসংখ্য পর্যটকের।
ভ্রমণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রীন ট্যুর’-এর ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান অভিযোগ করেন, অনেক সময় এসব  যানবাহনের চালকদের সিন্ডিকেট ভাড়ার কারণে অনেক পর্যটকের পক্ষে শেষতক সাজেক-ই যাওয়া হওয়া না। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকগামী নির্ধারিত কোন গণ-পরিবহন না থাকার সুযোগে হালকা যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে সব যাত্রীরাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইমা সেঁজুতি জানান, তারা সাজেকে একটি সিএনজি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে আট হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন। এই ভাড়া নির্ধারণ করেছে সিএনজি মালিক সমিতি। কিন্তু এসব পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারও নেই, চালকদের লাইসেন্স থাকা নিয়েও সন্দেহ আছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দেড়’শ কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়ার জন্য আট হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। অনিবন্ধিত এসব সিএনজি ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রেজিস্ট্রেশন বিহীন খাগড়াছড়ি সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা বিআরটিএ’তে একাধিকবার গিয়ে হয়রানির স্বীকার হওয়ায় এসব সিএনজি কিংবা থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র হালকা যানবাহনগুলোর স্ট্রেশন করাতে পারেনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশকে জানিয়েই টোকেনের মাধ্যমে এসব যানবাহন চলছে।
খাগড়াছড়ি বিআরটিএ’র উপরিচালক প্রদীপ কুমার দেব বলেন, ‘এসব যানবাহনগুলোর অধিকাংশরই ফিটনেস, চালকদেরও লাইসেন্স নেই, যার ফলে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে বিআরটিএতে আসতে পারছে না।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সড়ক কিংবা মহাসড়কে এসব রেজিস্ট্রেশনবিহীন হালকা যানবাহন  ট্রাফিক পুলিশের মুখোমুখি হলে সমিতির নেতাদের মাধ্যমে ছাড় পেয়ে যায়।’

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার এসপি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘নতুন সড়ক আইনে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত মামলা না করার নিদের্শনা রয়েছে। তারপরও পুলিশ প্রশাসন হালকা যানবাহন মালিক ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কোনও যানবাহন ও চালকের যদি আইনানুগ অনুমতি না থাকে তাহলে তাদের সড়কে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি পুলিশ টোকেনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসব গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান।

‘কনজিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’-এর খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সা: সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী জানান, সাজেক পর্যটন স্পটের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের আবাসিক ও খাবার হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং পাহাড়ি হস্তশিল্পের বাজারে বৈপ্লবিক উত্থান ঘটেছে। অথচ শুধুমাত্র অসাধু সিএনজি-থ্রি হুইলারের মালিক-চালকদের উৎপাতে পর্যটশরা অর্থনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এই অবস্থার নিরসন হওয়া জরুরী। তাছাড়া হাজার হাজার গাড়ি বছরেরর পর বছর রেজিস্ট্রেশনবিহীন কিভাবে চলে তাও রহস্যজনক।

জেলা প্রশাসক এবং জেলা পর্যায়ে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিসি)’-এর সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এ জেলায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিএনজি কিংবা থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র চলাচল করার কোনও সুযোগ নেই। অচিরেই জেলা প্রশাসন এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে বাধ্য করবে।’

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions