শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা (ভিডিওসহ)

প্রকাশঃ ০৩ মে, ২০১৮ ০২:২০:৫০ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৩৫:০৭  |  ৩৯২৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে (৫২) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া রূপম চাকমা (৩৫) নামে আরেক সহকর্মী গুলিতে আহত হয়েছেন। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয়রা ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ঘটনার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে শক্তিমান চাকমার দল জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপ।
এদিকে ঘটনার পর এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে। জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। নেমে আসে শোকের ছায়া। আহাজারিতে ফেটে পড়ছেন পরিবার ও স্বজনরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, শক্তিমান চাকমা তার সরকারি বাসভবন থেকে মোটরসাইকেলে উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা দুই অস্ত্রধারী মোটরসাইকেল থামিয়ে তার ওপর লক্ষ্য করে কমপক্ষে ৭/৮ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে ঘটনাস্থলেই শক্তিমানের মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এ সময় মোটরসাইকেল চালক রূপম চাকমা গুলিতে আহত হয়েছেন। তিনি জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের নানিয়ারচর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে।
পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির বলেন, ঘটনার পরপরই ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল গেছেন তিনি। দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে সম্ভাব্য এলাকায় পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হচ্ছে।





জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন শক্তিমান চাকমা। ১৯৯৫-৯৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য, বিজ্ঞান ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। এলএলবি পাশের পর আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত হন। বর্তমানেও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি পরবর্তী যোগ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিতে। দীর্ঘদিন জনসংহতির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন জনসংহতি সমিতি দুই ভাগে বিভক্ত হলে সমিতির সংস্কারবাদী (এমএন লারমা) দলের শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। গত ২০১৫ সালের নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শক্তিমান চাকমা। ১৮ মার্চ ইউপিএিফ সমর্থিত নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও জেলা কমিটির সভাপতি দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন শক্তিমান চাকমা। এছাড়া ইউপিডিএফ এবং জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের মধ্যে সহিংসতা চলে আসছে।





এ হ্ত্যাকান্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা ছাড়া কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা নয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের সংগঠন নিরন চাকমা বলেন, শক্তিমান চাকমাকে খুনের সঙ্গে তাদের কেউ জড়িত নেই। এটা জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধের কারণ হতে পারে বলে ধারণা।

শক্তিমান চাকমাকে হত্যায় আহাজারিতে ফেটে পড়েন তার স্ত্রী জয়তী চাকমা জেকি ও মেয়েসহ স্বজনরা। শক্তিমান চাকমার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের শুধু এক মেয়ে বর্তমানে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে অধ্যায়ন করছে বলে জানান তিনি।
অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, জেলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা বলেন, এ হত্যাকান্ড কখনও মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions