বৃহস্পতিবার | ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

রাজমিস্ত্রী’র যোগালি করেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন খাগড়াছড়ির রুবি মারমা

প্রকাশঃ ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:৫৩:৩১ | আপডেটঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:৩৯:২৪  |  ২৬৯০
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। সরকার যখন সারাদেশেই নারী শিক্ষার জন্য অবারিত অবৈতনিক সুযোগ নিশ্চিত করেছেন, সেই সুবর্ণ সময়েও খাগড়াছড়ির দরিদ্র এক পরিবারের পিতৃহারা রুবি মারমাকে রাজমিস্ত্রীর যোগালি খেটে লেখাপড়া চালাতে হচ্ছে। উপর্যুক্ত শিরোনামটি অবিশ^াসী হলেও সত্যি। রুবি মারমা, খাগড়াছড়ি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট-এ সেলাই ট্রেডে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। খাগড়াছড়ি শহরের অদূরে যৌথ খামার মারমা পাড়ার কুঁড়েঘরে দীনহীন বসতি। ছোটকাল থেকেই বাবা হারা রুবি আর তার ছোট ভাই রাসোন মারমাও পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে। মায়ের দিক থেকে একসময় প্রতাপশালী পরিবারের সন্তান হলেও এখন তারা সর্বহারা। সামান্য ভিটেটুক ছাড়া আর কিছুই নেই অবশিষ্ঠ।

মা সাইন্দা মারমাকে স্বামী ছেড়ে গেলেও তিনি দমে যাননি জীবনযুদ্ধে। নিজের জীবন-জীবিকা আর সন্তানদের সুন্দর জীবনের প্রশ্নে তিনি নেমে পড়েন দিন মজুরীতে। যখন যেখানে যাই পান দৈনিক শ্রম বিক্রি করেই কাটছে জীবন। শেষতক পেশা হিসেবেই বেছে নেন রাজমিস্ত্রী কাজের যোগালি হিসেবে। কিন্তু একার আয়ে মেয়ে রুবি আর ছেলে রাসোন’র ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে দিশেহারা জীবন যেনো বার বার হোঁচট খাচ্ছিল।

অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শিশুবয়সী কন্যা রুবিকেও তার সাথে নিয়ে যেতে থাকেন হালকা কাজে। সেই সংগ্রামী আর শ্রমের যেনো পিছু ছাড়ছে না রুবিকে এখনো। একটু একটু অভাব বোঝার সময় থেকে স্বেচ্ছায় রুবিও জড়িয়ে পড়েন মায়ের সহযাত্রী রাজমিস্ত্রীর যোগালি কাজে। স্কুলের বন্ধে অথবা অভাবের তাড়নায় কখনো ছুটি নিয়ে আবার কখনো ছুটি না নিয়েও মা-মেয়ে দু’জনই সমানে লড়ছেন অন্য এক জীবনযুদ্ধে।

কোন একদিন এই প্রতিবেদক আর ‘দি ডেইলি স্টার’ প্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান অন্য এক সংবাদের খোঁজে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন পাহাড়ি পথে। বিশ্রামের সময়টুকুতে মা সাইন্দা মারমা আর স্কুল শিক্ষার্থী কাম শ্রমিক রুবি মারমা’র জীবনগল্প শুনে শিউরে উঠেন।
সেই করুণ কাহিনীর কাছে হার মেনে জানতে রুবি’র কাছে প্রশ্ন ছিলো, তাঁর জীবনের চাহিদা কি?
জবাবে সহজ সারল্যের সাথে জানান, সেলাই ট্রেড-এ পড়ার কারণে ভালোই সেলাই করতে জানেন। কাটিংয়ের কাজ শেখা চলছে। তাই একটি সেলাই মেশিন পেলে রুবি’র জীবন হয়ে উঠবে খুশীতে রঙিন। তার মনের স্বপনগুলো ডানা মেলো উড়বে। একটি সেলাই মেশিন পেলেই তার চলবে।

অনেকের কাছে এই গল্প শোনালেও কারো মন গলেনি। শেষতক পার্বত্য জেলা পরিষদ-এর নারী সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শতরূপা চাকমা প্রতিশ্রুতি দিলেন, রুবি মারমা’র জীবন বিকাশে তিনি সব সময় থাকবেন।

তাঁরই অর্থায়নে বুধবার শেষ বিকেলে পাহাড়ি পথ বেয়ে ‘দি ডেইলি স্টার’ প্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান ও এই প্রতিবেদক কাঁধে করে নতুন একটি সেলাই মেশিন পৌঁছে দেন রুবি’র কাছে, রুবি’র বাড়িতে। কী দুর্ভাগ্য সেই মুহুর্তেও রুবি’র মা সাইন্দা হাজির থাকতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানলাম, মা সাইন্দা মারমা তখন শহরের সবচেয়ে বৃহত্তম শপিং মল ‘সেলিম মার্কেট’-এর ছয় তলায় কাজ করছিলেন। বিশালাকার সেই মার্কেটে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাই জানা হলোনা, তাঁর মায়ের অনুভূতি।
প্রতিবেশি গৃহবধু কুলছুম বেগম জানালেন, রুবি আর তার মায়ের পরিশ্রম অর্বণনীয়। বসত ঘরের অবস্থাও নড়েবড়ে। এ ধরনের পরিবারের পাশেই জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়ানো উচিত বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি।
রুবি মারমা তার চোখ ছলোছলো প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি ভাষাহারা। আমি জেলা পরিষদের সদস্য শতরূপা চাকমা’র কাছে শুধু ঋণী নয়, এই ‘সাংগ্রাই (মারমাদের এতিহ্যবাহী সাংবাৎসরিক প্রধানতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব)-এ জীবনের শ্রেষ্ঠতম উপহার-অর্জন। এবার আমি নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করবো।
শতরূপা চাকমা জানান, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান থাকার সময়ও তিনি এ ধরনের প্রকৃত দু:স্থ-অসহায়দের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, এ ধরনের শিশু ও নারীদের জন্য তিনি প্রয়োজনে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করে তাদেরকে সংগঠিতভাবে নিয়ে কাজ করবেন।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions