পার্বত্য চুক্তির অসাংবিধানিক ও বিতর্কিত ধারা সংশোধন করার দাবী
প্রকাশঃ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০৭:২৮:৩৯
| আপডেটঃ ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:৪৭:৫৬
|
১০২৫
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অসাংবিধানিক ও বিতর্কিত ধারা সমূহ সংশোধনের দাবীতে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালী ছাত্র পরিষদের আলোচনা সভা আজ সকালে পৌরসভাস্থ রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য অধিকার ফোরামের রাঙামাটি জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান এর সভাপতিত্বে ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ নাজিম আল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা বেগম নূর জাহান, পার্বত্য শ্রমিক পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোঃ রাসেল ইসলাম সাগর, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ বাকী বিল্লাহ্, মোঃ মুমিন, মোঃ মোস্তফা, সদস্য সচিব আব্দুর রাজ্জাক, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন তৎকালীন তথা বর্তমান আ’লীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর পার হলো। কিন্তু যে কারণে বা যে শর্তের ভিত্তিতে সরকারের সাথে এ চুক্তি করা হয়েছে তার সুফল এখনো পাহাড়ের বাসিন্দারা পায়নি।
একটা সময় পাহাড়ে জেএসএস তান্ডব চালালেও এখন পাহাড়ে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এসব আঞ্চলিক সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো- চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম, চালিয়ে পাহাড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা। প্রশাসন যেমন একদিকে অসহায় তেমনি এ অঞ্চলের মানুষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। কখন মৃত্যুর আলিঙ্গন করতে হয়। তাই তাদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে প্রতিনিয়ত নিয়ম মাফিক বাৎসরিক চাঁদা দিতে হয়। প্রশাসনও নিশ্চুপ। তাহলে কে পাহাড়ের অসহায় মানুষকে এসব সশস্ত্র বাহিনীর করাল গ্রাস থেকে মুক্তি দিবে?
এদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ড হলো-পার্বত্য চট্টগ্রাম। তাই সারা দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ে সেনাবাহিনী একদিকে যেমন দেশের স্বার্বভৈৗমত্ব রক্ষা করছে ঠিক অন্যদিকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু রাষ্ট্রের এমন বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য পাহাড়ের বিশেষ মহল প্রতিনিয়ত অপবাদ, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে উৎখাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে উৎখাত করতে কখনো দুর্বল নারীদের উপর এ মহলটির সন্ত্রাসীরা ধর্ষণ করে সেনাবাহিনীর উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনো আবার ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে সেনাবাহিনীর উপর কলঙ্ক দেওয়া হচ্ছে।
এ মহলটি শুধু এসব অপকর্ম করে ক্ষান্ত হয়নি। বর্তমানে ধর্মীয় উপসনালয় ভাংচুর করে দেশের গর্বিত সেনাবাহিনীর উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অথচ ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা- ১৯৭৪ সাল থেকে সেনাবাহিনী পাহাড়ে অবস্থান করে অন্ধকার পাহাড়ে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় এ এলাকায় ব্যবসা করার জন্য তৎকালীন একটি গ্রুপকে চাঁদা দেওয়া হলেও বর্তমানে চারটি গ্রুপকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ঠিকাদার, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মাছ, গাছ ব্যবসা সকল স্থলে চাঁদা আর চাঁদা। না হলে বন্দুকের বুলেটে মৃত্যু অনিবার্য। যে কারণে ব্যবসার স্বর্গরাজ্য পাহাড় হওয়ার সত্ত্বেও ব্যবসা আর জমছে না। হতাশ ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিমত- সরকারকে কর দিয়ে স্বাধীন দেশে ব্যবসা করছি। এখন সরকারের পাশাপশি চারটি গ্রুপকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয় তাহলে আমাদের লাভ হলো কি? চোখে-মুখে তাদের চরম ক্ষোভ।
তাই চুক্তির পূর্তি নিয়ে পাহাড়ের বাসিন্দারা আর ভাবে না। তাদের দাবি এসব অরাজকতা থেকে মুক্তি চায়।এদিকে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে বর্তমান সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এখানকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের অবসান ঘটানো হয়। কিন্তু চুক্তির ২১ বছর পার হলেও এখনো পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ হয়নি। ভ্রাতৃত্বঘাতি সংঘাত, চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ বিভক্ত হয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।
বক্তারা আলোচনা সভায় ১৩টি দাবী তুলে ধরেন, উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্যে রয়েছে (১৯০০ সালের ১নং আইন) সহ সকল প্রকার বিতর্কিত অসাংবিধানিক আইন সমূহ বাতিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সংশোধন করে “উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল” এই অসাংবিধানিক শব্দগুলি বিলুপ্ত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তর বাঙালী জনগোষ্ঠীদের গুচ্ছগ্রাম হতে তাদের স্ব স্ব ভূমিতে পুনর্বাসন করে ভূমির অধিকার ফেরত সহ আর্থিক ক্ষতি পূরণ দেয়া, অবিলম্বে খাস জমি বন্দোবস্তি প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম চালু, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিতর্কিত ও অসাংবিধানিক ক(১), খ(৩), ২৬(ক), গ(১০), (ঘ)১০ নং দফা সহ পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৪(১) (ক) ধারা অবিলম্বে সংশোধন, এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন সমূহ সংশোধন করে বৃহত্তর বাঙালী জনগোষ্ঠী সহ সকল সম্প্রদায়ের জন্য জেলা পরিষদের “চেয়ারম্যান পদটি” উন্মুক্ত করে সাংবিধানিক অধিকার সু-নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।