মঙ্গলবার | ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

কাল পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি

প্রকাশঃ ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০১:২৩:৫৬ | আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০৩:৫৮:০৬  |  ১৩২০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১তম বর্ষপূর্তি কাল রোববার । পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় ও রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে এর স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তৎকালীন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলা সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের। অস্ত্র সংবরণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন পাহাড়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র গেরিলারা। আর এতে করে পাহাড়ে শুরু হয় শান্তির বাতাবরণ।

কিন্তু চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত। ক্ষুব্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন, সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে। একই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয় দশম জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারেও। কিন্তু পরপর দু’দফা মেয়াদে গত ১০ বছরে অঙ্গীকার থেকে গেল অপূর্ণ। ফলে এ নিয়ে বরাবরই দূরত্ব থেকে গেল সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যকার। তবে সরকারি দল বলছে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

অন্যদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সমাদৃত হয় দেশে-বিদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূষিত হয়েছিলেন ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কারে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আবারও ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন সন্তু লারমা। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজ পার্বত্য অঞ্চলে শুধু শোষন, নিপীড়ন, অবিচার, হতাশা, নিরাশা ও হাহাকার। প্রতিদিন জুম্মরা জমি হারাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে, প্রতিদিন তারা অপমানিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। প্রতিদিন মা-বোনেরা কোন না কোনভাবে অপমানিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী যতই দাবি করুক না কেন তার শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নয়নমুখী ও প্রগতিশীল, কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের দিকে যদি তাকাই, তাহলে বাস্তবে তা সত্য নয় বলে বুঝা যায়। বস্তুত: সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী চায় পার্বত্য অঞ্চলে ১৪টি আদিবাসী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাক, অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হোক। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে পাহাড়ের বুকে চলছে উপনিবেশিক কায়দায় চলছে দমন-পীড়ন, শোষন-বঞ্চনা ও অত্যাচার-অবিচার। ১৯৪৭ সালে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের উত্তরসুরী হিসেবে আজকে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী ১৪টি আদিবাসী জুম্ম জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস করতে সদা তৎপর রয়েছে।

শাসকগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, চরম দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, দলীয়করণ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের অসদিচ্ছা ও অনীহা, শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট পার্বত্য চুক্তি ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী সশস্ত্র সংগঠনসমূহের অত্যাচার ও অনাচার, বেআইনী অনুপ্রবেশ ও ভূমি বেদখল, গ্রেপ্তার, তল্লাসী অভিযান, মিথ্যা মামলা, দমনপীড়ন ও সেনা সন্ত্রাসের ফলে আজ জুম্ম জনগণ গভীরভাবে শঙ্কিত ও শাসকগোষ্ঠীর উপর ক্ষুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে জুম্ম জনগণ একটা নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে অনাগত দিনের করণীয় নিয়ে আজ গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।


জনসংহতি সমিতির  সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, সরকার বরাবরই নানা অজুহাত দেখিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করে যাচ্ছে। অথচ দেশের উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা দরকার সরকারকে।

উষাতন তালুকদার এমপি আরো বলেন, সরকার জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করেনি, চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো সাধারন প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা, বন ও পরিবেশ, পুলিশ ও ভুমি ও ভুমি ব্যবস্থাপনা এখনো জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতায়ন করে স্থানীয় শাসন বা জনগনের শাসন প্রর্বতন করা উচিত।
উষাতন তালুকদার এমপি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষযটি অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানান।

চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় শান্তি চুক্তির বর্ষপুর্তিতে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, শান্তি চুক্তির পর অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা, কিছু প্রতিষ্ঠান হওয়া এসব ছাড়া চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অংকে কষে চুক্তির বাস্তবায়নের হিসাব করা যায় না, জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ কার্যকর এবং এগুলোর নির্বাচন হয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের একটি পরিবারও পুর্নবাসন হয়নি, এসব পরিবার মানবেতর দিন যাপন করছে।

রাজা দেবাশীষ রায় আরো বলেন, সামনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও সবদলের অংশগ্রহণ মুলক হোক আমরা সেটাই চাই। তাহলে দেশে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ থাকবে, স্থিতিশীল পরিবেশ থাকলে শান্তি চুক্তিও বাস্তবায়ন করার পরিবেশ থাকবে।



অপরদিকে সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির সিংহভাগই বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেছেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। আগামী নির্বাচনের পর সরকার চুক্তির বাকি অংশগুলো বাস্তবায়ন করবে।

পার্বত্য সম অধিকার আন্দোলনের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কামাল বলেছেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে অশান্তির বীজ বপন করা হয়েছে, একটি গ্রুপ আত্বসমর্পন করলেও এখন ৪টি গ্রুপ পাহাড়ে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। চুক্তির মাধ্যমে বাঙালীদের অউপজাতীয় বানানো হয়েছে, বাঙালীদের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক চুক্তির ধারা সমূহ বাতিলের দাবি জানান।

এদিকে কাল পালিত হবে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২১ বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন মহলের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকা ও তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে সকালে  আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং রাঙামাটি রিজিয়নের উদ্যেগে আলোচনা সভার পাশাপাশি সন্ধ্যায় রাঙামাটি ষ্টেডিয়ামে সম্প্রীতির কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। বিকালে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।


রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions