সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকান্ডে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী আবুল কাশেম প্রকাশ মইস্যা কাশেমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার বিকালে জেলাশহরের শালবাগানের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রলীগকর্মী রাসেল হত্যাকান্ডে তিন আসামী গ্রেফতার হলো।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আবুল কাশেম ওরফে মইস্যা কাশেম মামলার ৪ নম্বর এজাহারভূক্ত আসামী। সে রাসেল হত্যাকান্ডে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম। আবুল কাশেম আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল ইসলাম পিসি হত্যাকান্ডেরও চার্জশীটভূক্ত আসামী। এছাড়াও সে ২০১০ সালে খাগড়াছড়িতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় সান্ধ্য আইন ভঙ্গের অভিযোগে চার্জশীটভূক্ত আসামী। সে বন আইনসহ কয়েকটি মামলারও আসামী।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু আরো জানান, ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকান্ডে সকল আসামীকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং হত্যাকারীদের আটক করতে পুলিশ মাঠে রয়েছে। গ্রেফতারকৃত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে সিনিয়র জুডিশায়ল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো: নোমান এর আদালতে আটক আবুল কাশেম প্রকাশ মইস্যা কাশেম ও স্কুল ছাত্র আকাশকে হাজির করা হলে আদালত শুনানী শেষে জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। নতুন কুঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট হাইস্কুলের ৯মশ্রেনীর ছাত্র আকাশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। কোর্ট জিআরও খোকন মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলার পরবর্তী শুনানী ৮ এপ্রিল।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরের মিলনপুর এলাকায় দুর্বৃত্তরা ছাত্রলীগ কর্মী রাসেলকে কুপিয়ে আহত করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টা জেলার মানিকছড়ি এলাকায় সে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়ে।
এ ঘটনায় নিহত রাসেলের মা খোদেজা বেগম রবিবার রাতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামীলীগে শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলমসহ প্রতিপক্ষের ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অন্তত ১০/১৫ অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসাসী করে মামলা হয়েছে।
শুরু থেকেই খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র অনুসারিরা ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকান্ডের জন্য পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমের অনুসারিদের দায়ী করে আসছে।
রোববার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনগুলো খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে রাসেল হত্যাকান্ডের জন্য পৌরসভার মেয়র ও তার সহযোগিদের দায়ী করে হত্যাকারীদের আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারী দেওয়া হয়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, গত পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকে মেয়র রফিকুল আলমের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় আওয়ামীলীগের ২৬ নেতাকর্মী পঙ্গু ও দুই হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে।
উল্লেখ, গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগে বিভক্তি দেখা দেয়। সে থেকে দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিনিয়ত হামলা,মামলা ও সংঘর্ষ লেগেই আছে।