প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে মাটিরাঙ্গায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশঃ ৩১ জুলাই, ২০২১ ০৭:৫১:৩৮ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০১:০৭:০৫
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায়  মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে  অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  সরকারি অর্থয়ানে নির্মিত হলেও হতদরিদ্রদের  কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত   আদায় করা হয়েছে।

উপজেলার গোমতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে ভুক্তভোগীরা।  তাদের অভিযোগ ঘরের বরাদ্দ পেতে চেয়ারম্যানকে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা দেওয়ার পর নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ৪৫ কেজি করে রড বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হয়েছে গেলবোনাইজ আয়রন(জিআই) তার! লোহার রড ছাড়াই নিম্নমানের ঘর বানিয়েছে চেয়ারম্যান। আশ্রয়ন প্রকল্পে এমন অভিযোগে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দের তালিকায় নাম থাকার পরও চেয়ারম্যানের দাবি অনুযায়ি ৫০ হাজার টাকা দিতে নাই পারায় ঘর পায়নি দিনমজুর আবু তাহের। এই নিয়ে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। আবু তাহের বলেন ,ঘর বরাদ্দের উপকারভোগীর তালিকায় আমার নাম ছিল এক নাম্বারে। চেয়ারম্যান আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলেন । আমি টাকা দিতে না পারায় আমার নামের বরাদ্দকৃত ঘর ইসমাইল হোসেন নামে এক প্রভাবশালীকে বরাদ্দ দিয়েছে চেয়ারম্যান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর বরাদ্দ পায় গোমতি ইউনিয়নের শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা মালেকা বেগম।  তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘ ঘরের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আমার কাছে গোমতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটন ৫০ হাজার টাকার দাবি করে। আমি ধার দেন্ াকরে চেয়ারম্যানকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর আমাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। রমজানের আগে থেকে ঘরের কাজ বন্ধ । এখনো ফ্লোর করা হয়নি,টয়লেট বসায়নি। ’

শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা ফুল মিয়া ও সেলিনা বেগম । এই দম্পতিও ২০২০-২১ অর্থ প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর বরাদ্দ পায়। তবে ঘরের বরাদ্দ পেতে তারা চেয়ারম্যানকে দিয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এই দম্পতি জানান ,‘ ঘরের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য  চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে গরু বিক্রি করে আমরা চেয়ারম্যানকে ২৫  হাজার টাকা দিয়েছে। অথচ আমার ঘরটা দেখেন! কোথাও লোহার রড ব্যবহার করেনি। কেবলমাত্র জিআই তার দিয়েছে। সাত বস্তা বালুর সাথে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়েছে। মিস্ত্রীরা বালু বেশি দিয়েছে। ’
একই গ্রামের বাসিন্দা আনু মিয়া বলেন,‘ আমি ঘরের জন্য চেয়ারম্যানকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি।এরপর আমার ঘরেও কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঘরে কোন লোহার রড ব্যবহার করা হয়নি। গোমতি বাজার এলাকার বাসিন্দা আজমেহের জানান ,‘ ঘরের   কাজ এখনো শেষ হয়নি পিলার ভেঙে পড়ে গেছে। ঘরে ভিতর কোন রড দেয়নি। ঘরের কাজ বন্ধ এখন প্রায় ৩ মাস। ’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটন জানান ,‘ আমি টাকা নিই নাই ,আর টাকা নিতে যাব কেন, প্রধানমন্ত্রী ঘর। ঘরের কাজ ভালো করার জন্য যা যা করার দরকার করেছি। ঘরে জিআই তার ব্যবহার প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন,‘তার দিয়ে ছাউনির কাঠ বাঁধা হবে। পিলারে কোন রড বরাদ্দ না থাকায় জিআই তার দিয়েছি। চেয়ারম্যান দাবি করেন,লিনটারের ভিতর রড আছে। রড বরাদ্দ নাই ঘর শুধু ইটের উপর থাকবে। ’

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) মো.হেদায়েত উল্ল্যাহ জানান ,‘ আমি এখানে ৩ দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। এখনো কিছু ঘরের কাজ চলমান আছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো.কামরুল হাসান মুঠোফোনে জানান,‘ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘরগুলো যে মানে নির্মিত হওয়ার কথা সেই মানে নির্মিত হতে হবে। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম ,দুনীর্তি বরদাস্ত করা হবে না ।


 


সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions