কাল ভয়াল ১৩জুন

প্রকাশঃ ১৩ জুন, ২০২১ ০২:৪৭:৩৬ | আপডেটঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৪:৫০:০২
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। দুঃসহ স্মৃতি বেদনার ২০১৭ সালের সেই ভয়াল ১৩ জুন কাল  রোববার। দিনটি রাঙামাটিবাসীর জন্য খুবই বেদনার। শোকের আর কান্নার। যার ভয়াল চিত্র নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে রাঙামাটির মানুষ। কিন্তু যে সব জায়গায় পাহাড় ধব্বসের ঘটনা ঘটেছিলো সে সব ঝুকিপুর্ণ স্থানে মানুষ আবারো ঘরবাড়ী নির্মাণ করে থাকছে।  রাঙামাটি জেলা সদরসহ জেলায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ ঝুকিতে বসবাস করছে।

২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের দুর্যোগে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরবর্তী ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ২ শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিন জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে রাঙামাটির বহু মানুষ। কিন্তু তারপরও অসংখ্য মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

জেলা প্রশাসন ও রাঙামাটি পৌরসভার তথ্যমতে, শহরের আনাচে-কানাচে পাঁচ হাজারের অধিক পরিবারের মানুষ বসবাস করছে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও পাঁচ হাজার পরিবারের মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসত করছে। এসব এলাকায় প্রবল বর্ষণে যে কোনো মুহূর্তে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াল পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের শিমুলতলী, ভেদভেদি মুসলিমপাড়া, টেলিভিশন সেন্টার এলাকা, রেডিও ষ্টেশন, যুব উন্নয়ন এলাকা, রাঙাপানি, তবলছড়ি ও মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বহু মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ও ঢালে ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। অথচ ওইসব এলাকায় ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ব্যাপক জানমালের ক্ষতিসাধিত হয়েছে। তবু বিধ্বস্ত ভিটায় নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত করে বসবাস করছে মানুষজন। ওইসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়ে আসছে জেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসে বিধিনিষেধ জারি করে সাইনবোর্ড স্থাপন ও লিফলেট বিতরণসহ সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তবু নিরাপদে সরছে না মানুষ। সদরের বাইরে জেলার কাপ্তাই, কাউখালী, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে বহু পরিবারের মানুষ।  


প্রতি বছর বর্ষণে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধসের দুর্যোগ ঘটে, সেসব এলাকায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লোকজন বসবাস করে আসছে। আবার অনেক জায়গায় ধসে যাওয়া পাহাড়ি ভূমি বিক্রিও হচ্ছে। এসব জায়গা কিনে মেরামত করে তৈরি করা হচ্ছে স্থাপনা। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠছে জনবসতি।

এদিকে ভূমিধসসহ সম্ভাব্য যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতিমূলক জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যে কোনো দুর্যোগকালীন সরকারি ছুটির দিনেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে বলে দেওয়া হয়েছে। কোনো দুর্যোগ চলাকালে যদি কেউ কর্মস্থলে হাজির না থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।



জেলা প্রশাসক আরও বলেন, পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসের নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবু কেউ যদি ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘর ছেড়ে নিরাপদে সরে না যায়, তাদেরকে জোর করে নিরাপদে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। সামনে দুর্যোগের আশঙ্কা অনেক। বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। শহরের মধ্যে পাহাড় ধসের দুর্যোগে ৩৩ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। দুর্যোগকালীন স্কুল-কলেজগুলো খোলা রাখতে প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলে দেওয়া হয়েছে। আমরা যার যার অবস্থান থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসাররা যার যার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এদিকে শহরসহ জেলায় পাহাড়ধস প্রতিরোধে আজও কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেই সরকারের। তবে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত চলছে বলে জানান, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন।

তিনি জানান, গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুসারে জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কের অনেগুলো অংশ ও স্থানে স্থায়ী মেরামত শেষ করা হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ করা যাবে চলতি বর্ষা মৌসুমের পরে। কারণ বর্ষায় কাজ করলে সড়কের ক্ষতি আরও বেড়ে যাবে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions