অপরিকল্পিভাবে বৃক্ষ নিধন, নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারনে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশঃ ১৭ অগাস্ট, ২০১৯ ১০:২০:১৬ | আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪ ১১:৫৯:৪১
সিএইচটি টুডে ডট কম,  রাঙামাটি। শনিবার রাঙামাটিতে আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে টেকসই পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, অপরিকল্পিভাবে বৃক্ষ নিধন, নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারনে পাহাড়ে পানির উৎস শুকিয়ে গেছে। এসব পানির উৎস সংরক্ষণে বনায়নের বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এ বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ও পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির প্রমুখ।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত গবেষণার টিম লীডার ড. সঞ্জীব কুমার ভুচার ও রিমোট সেনসিং ডিভিশনের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম। সেমিনারে বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রথাগত জনপ্রতিনিধি (মৌজা ও গ্রাম প্রধান) ও মিডিয়াকর্মী অংশ নেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, বন ধ্বংসের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে পানির উৎস শুকিয়ে গেছে। এসব পানির উৎস রক্ষায় নদ-নদী পাহাড়ি ছড়া, ঝরনা সংরক্ষণ করা দরকার। এ জন্য বনায়নের বিকল্প নেই। কিন্তু বনায়ন করতে গেলে বাধা দিতে যায় আঞ্চলিক দলগুলো। পানির অপর নাম জীবন। তাই মানুষের জীবন বাঁচাতে কেউ বাধা দিলে ছাড় দেয়া হবে না। পাহাড়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতার প্রশ্নে বীর বাহাদুর বলেন, এখানে যারা এনজিও করেন- তাদের কেউ জবাবদীহি করতে না চাইলে তারা সোজা গাইট্টি (তল্পিতল্লা) বেঁধে চলে যেতে পারেন।

মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তি চুক্তি হয়েছে। এরপর আর পাহাড়ে কোনো ধরনের অস্ত্র থাকার কথা নয়। রাজনীতির নামে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো অবৈধ। যারা ব্যবহার করছে, তারা সন্ত্রাসী। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে পাহাড়ে হত্যা, অপহরণসহ বিপুল চাঁদাবাজি হচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব কর্মকান্ড সমূলে উৎপাটন করা হবে। জনগণ ক্ষেপলে কারও রক্ষা নেই।

তিনি বলেন, পাহাড়ে এত চাঁদাবাজি হচ্ছে- অথচ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বা দুস্থ অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য কারও কাছে কী এক বস্তা চাল পাঠিয়েছেন ? গরিব ছাত্রছাত্রী কাউকে কোনো বই কিনে দিয়েছেন ? এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে, আক্রান্ত কারও চিকিৎসার জন্য কোনো ওষুধ কিনে দিয়েছেন ? এসব চাাঁদাবাজি কার জন্য ? আপনারা রাজনীতি করেন না। ব্যক্তির স্বার্থনীতিতে জড়িত। এটা অন্যায়। অন্যায়কারী কেউ টিকতে পারবেন না।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বনায়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জনসংহতি সমিতির বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সরকার রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় করতে গিয়ে তাতেও বাধা দিয়েছিল তারা। এখানে যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। আর তাদের টার্গেট বিএনপি, জামায়াত নয়- আওয়ামী লীগ। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions