ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, স্বাভাবিক হয়নি সড়ক যোগাযোগ

প্রকাশঃ ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০৪:০১:২৬ | আপডেটঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:১৩:৩৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে বন্যার পানি নামলেও এখনো চালু হয়নি সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ। বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়ায় এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গত আটদিন ধরে এখনো বন্ধ রয়েছে,তবে গতকাল রাত থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলা শহরের নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নেমে গেছে। এছাড়া ও জেলা সদরের সাথে অপর ৬টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে জেলা শহরে বন্যার পানি অনেকটা নীচে নেমে গেছে।

কয়েকদিনের ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জনসাধারনের দূর্ভোগ বেড়ে গেছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় সাঙ্গু নদীর পানি কমে যাওয়ায় বন্যার্তদের বাড়ী ঘর থেকে পানি সরে গেলেও কাদার কারনে বাড়ীতে যেতে পারছে না আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষজন। অনেকের ঘরবাড়ী বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঘরের কাদা আসবাবপত্র পরিস্কার করতে হিমসিম খাচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবারের লোকজন। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের ঘর ডুবে যাওয়ায় নিজেদের ঘর পরিস্কারের কাজে ব্যস্ত থাকায় কাজের জন্য মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে বন্যা পরবর্তী বান্দরবানের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যুৎতের বেলকি ভাজিতে জেলা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন,সারাদিনে গড়ে ১ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না, আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করার কারণে অনেকের দামী ইলেকট্রনিক্স জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবন বিপযস্ত হয়ে পড়ছে ।

এদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর জেলা সদরের বালাঘাটা পুল পাড়া এলাকায় নবনির্মিত ব্রীজের সংযোগ সড়কে উদ্ধোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে ফাটল,অনেক এলাকায় সড়ক ধসে গেছে। কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ী ভেঙ্গে গেছে।

বন্যার পানিতে ডুবে কমপক্ষে দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে কয়েক হেক্টর আবাদী জমির ফসল। প্রশাসন সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতির পরিমান জানাতে না পারলেও ধারনা করা হচ্ছে এবারের বন্যায় কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার কারনে জেলার দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

  অপরদিকে সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার পানি সরে গেলেও সাতকানিয়ার বাজালিয়া এলাকায় সড়কের পানি না সরায় টানা এক সপ্তাহ ধরে সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বাইরে থেকে কোন জিনিষপত্র আনতে না পারায় বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে। যা স্টক ছিল তা শেষ হয়ে গেলে নিত্য প্রয়োজনি সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

বন্যা কবলিত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র গুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট এবং কিছু কিছু বন্যার্থী ত্রাণ সামগ্রী পায়নি বলে অভিযোগ করেছে,যদিও প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বন্যায় কবলিত লোকজনদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।  
   বান্দরবানের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো:শফিউল আলম বলেন,বন্যার পানি সরে গেছে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বন্যা পরবর্তী মানুষের দূর্ভোগ কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পেয়েছি। সাত উপজেলা থেকে আমরা ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য সংরক্ষণ করছি। বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি হয়েছে। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট করে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ জানানো যাচ্ছে না। চারিদিকে বন্যা কবলিত হওয়ায় পুরো জেলায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো অনেক মানুষ রয়েছে, তাদেরকে শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে।
 
ত্রান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে এই পর্যন্ত ৪৫০ মে.টন জিআর চাল,৭ লক্ষ ৭৫ হাজার নগদ অর্থ প্রদান করেন। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও নিরাপদ পানি ও খাবার স্যালেইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার ১৩৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্রে ১০ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

 
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions