সিএইচটি টুডে ডট কম, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। "সাংগ্রাইং মা ঞি ঞি ঞা ঞা রি কাজাই গাই পামে ও ঞিং ওকো রো ও এমে ¤্রইি রো লাগাই লাগাই চুও প্য গাই মেলে। অর্থাৎ 'এসো এসো সাংগ্রাইতে এক সাথে মিলে মিশে জলকেলীতে আনন্দ করি"। মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে মারমা শিশু, কিশোর, তরুন, তরুনীরা এই মারমা গানের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এছাড়া এই উৎসবের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য মারমা তরুন তরুনীরা একে অপরের দিকে পানি ছিটিয়ে পুরাতন বছরের সকল গ্লানি দুঃখকে ভুলে নতুন বছরকে বরন করে নেয়।
সাংগ্রাই জল উৎসবকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার সমগ্র চিৎমরম এলাকা পরিনত হয়েছে উৎসবের আমেজে। সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের আগমন ঘটেছে এই উৎসবে। শুধু যে কাপ্তাইয়ের স্থানীয়রা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে তা নয়। মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও তিন পার্বত্য অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতি বছর চিৎমরম এলাকায় ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই জল উৎসবে হাজার হাজার জনসাধারণের আগমন ঘটে। জাতি, শ্রেণী, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে দলে দলে মানুষ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে উৎসবকে ঘিরে গত ১৩ এপ্রিল হতে চিৎমরম বিহার প্রাঙ্গণে বসেছে লোকজ মেলা। হরেক রকম পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। হাজার হাজার দায়ক দায়িকার আগমন ঘটেছে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে।
রোববার (১৫ এপ্রিল) সকালে চিৎমরম বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গন এলাকা হতে সাংগ্রাই উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। পরে র্যালীটি সাংগ্রাই জল উৎসবের মূল অনুষ্ঠানে এসে শেষ হয়।
এসময় চিৎমরম বিহার মাঠ প্রাঙ্গনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা। ক্যমংচিং মারমা জয় এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই উপজেলার আওয়ামীলীগ সভাপতা অংসুইছাইন চৌধুরী।
উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক এবং ৩নং চিৎমরম ইউপি চেয়ারম্যান খাইসাঅং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বিকাশ তংচংগ্যা, কাপ্তাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল আলম, ৩২৩নং চিৎমরম মৌজার হেডম্যান ক্য ও সিং মং মারমা।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ক্যজহ্লা মারমা। এছাড়াও কাপ্তাই ওয়াগ্গাছড়া জোনের ১৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল শহীদুল ইসলাম সহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে জলকেলী উৎসব উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে র্ঐতিহ্যবাহী মারমা নৃত্য এবং গান পরিবেশিত হয়।
এদিকে উৎসবে আসা হ্লাচিং মারমা নামক এক মারমা তরুনীর কাছে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে সে জানায়, গত বছরের গ্লানি ও দুঃখ, কষ্ট ভুলে নতুন বছরকে আনন্দের সাথে বরণ করে নিয়েছে। সে তাঁর পরিবার ও তার বন্ধুদের সাথে মেলায় এসেছে।