পরিকল্পনার অভাবে পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে রাঙামাটি

প্রকাশঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৩:১৩:২০ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৮:৩৯:৪৬
সিএইচটি  টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পাহাড় লেক নদী বেস্টিত পর্যটন শহর রাঙামাটি, পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এখনো পর্যটন শিল্প হিসেবে রাঙামাটি এগোতে পারছে না। অপর দুই পার্বত্য জেরা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পর্যটন শিল্পে অনেকটা এগিয়ে গেছে। ২০১৫ সনে পর্যটন বিভাগ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হওয়ার পর পর্যটন উন্নয়নে ১২শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করলেও সেটি এখনো অনুমোদিত হয়নি, আশানুরুপ পর্যটন স্পট না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

পাহাড় লেক নদী বেস্টিত পর্যটন শহর রাঙামাটি, পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এখনো পর্যটন শিল্প হিসেবে রাঙামাটি এগোতে পারছে না।  তবুও প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটক যান্ত্রিক শহরের একটু ক্লান্তি দুর করতে ছুটে আসেন রাঙামাটি। প্রতি সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচে ভিড় থাকে। সাপ্তাহিক ছুটি কাজে লাগিয়ে বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ আর উচ্চলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভূলিয়ে দিচ্ছে জীবনের নানা জটিলতা।  শহরের পর্যটন স্পট সুভলং ঝর্ণা,পর্যটন হলিডে কমপ্ক্সে,সুখী নীলগঞ্জ, ডিসি বাংলো, পলওয়ে এবং রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছে শত শত পর্যটক। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক পাহাড় লেক নদীর অপরুপ সৌন্দর্য্যর কথা বললেও তারা অনেকটা হতাশও হয়েছেন দেখার মত আরো কিছু না থাকায়।

১৯৬০ সালে বিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সৃষ্টি হয় বিশাল কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। এ হ্রদ বিদ্যূৎ উৎপাদনের পাশাপাশি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটও গড়ে উঠে।  রাঙামাটিতে পর্যটন স্পটের মধ্যে শুভলং এর মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, রাজ বন বিহার, পেদা টিং টিং, জেলা প্রশাসনের বাংলো, ইকো টুক টুক ভিলেজ রয়েছে। এছাড়া উপভোগ করার মত রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম ও সহজ সরল জীবন যাত্রা। সারা বছর রাঙামাটির পর্যটনকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আরো বেশী আকর্ষনীয়  করতে হলে পর্যটন খাতে সরকারী-বেসরকারীভাবে উদ্যক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আর সেই সাথে পর্যটন স্পটগুলোর সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ আকর্ষণীয় করা গেলে একদিকে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটবে তেমনি করে অর্থনীতিতে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে অনেকেই করছেন। জেলা পরিষদের বড় প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় জেলা পরিষদ গত ৩ বছরে পর্যটনের উন্নয়নে কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি, তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন পর্যটনের উন্নয়নে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।  

রাঙামাটিতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা তামান্না জানান, রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর, রাঙামাটি না আসলে সেটি বোঝা যেত না। কিন্তু এখানে লেক, শুভলং ঝর্না, আর কাপ্তাই লেক ছাড়া দেখার কিছু নেই, বাচ্ছাদের জন্য শিশু পার্ক নেই, পর্যটন এলাকায় বসার জায়গা নেই। একদিন বা দু’দিনে সব ঘুরে দেখা যায়, তাই পর্যটকরা যেন রাঙামাটি এসে কয়েকদিন থাকতে পারে সে ধরণের পরিকল্পনা নেয়া দরকার।

পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত তরুন উদ্যোগক্তা গরবা রেষ্টুরেন্টের পরিচালক বাদশাহ ফয়সাল জানান-, আমরা খুবই আশাহত, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পর্যটন শিল্পে এগিয়ে গেলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের প্রয়োজন আন্তরিকতা ও সমন্বয়, জেলা পরিষদ ও পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটন শিল্প বিকাশে আন্তরিকভাবে এগিয়ে এখানে অনেক কিছু করা সম্ভব। ২/৩ বছর আগে থেকে শুনে আসছি রাঙামাটি জেলা পরিষদ পর্যটন স্পট বাড়াতে ১২শ কোটি টাকার কাজ করবে, কিন্তু এখনো আশার আলো দেখছি না। তারা বড় বড় প্রকল্পের আশায় না থেকে ছোট ছোট প্রকল্প নিতে পারে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, রাঙামাটির সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পটগুলোতে কাজ করবে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে শহরের শিশু পার্কটির উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাঙামাটি শহরের সৌন্দর্য্য রক্ষা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, তবে বেসরকারি উদ্যোগক্তারা এগিয়ে আসলে জেলা প্রশাসন থেকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

রাঙামাটির সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেছেন, পর্যটকদের জন্য আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও অনুকুল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, আর এই দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে, জনগন কি চায়, জনগনের সাথে আলোচনা করে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করলে পর্যটন শিল্প বিকাশে কোন সমস্যা থাকার কথা না। যারা এখানে বিনিয়োগ করবে তারা নিরাপত্তা এবং ব্যবসায়ে লাভ খুজবে, তাদের বিষয়টিও দেখতে হবে।


২০১৫ সনে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয় পর্যটন বিভাগকে, হস্তান্তরের ৩ বছর পার হয়ে গেলেও তারা উল্লেখযোগ্য কাজ কাজ করেনি, ১২শ কোটি একটি প্রকল্প গ্রহণ করলেও সেটি অনুমোদন না পাওয়ায় জেলা পরিষদে ছোট খাট কাজগুলোও করছে না। পর্যটনে বিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রাঙামাটিকে পর্যটন শহর বলা হলেও এটি দেশ বিদেশে পর্যটকদের কাছে তোলে ধরতে নেই কোন উদ্যোগ। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে রাঙামাটির বিশাল সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে এটি একটি আয়ের একটি অন্যতম খাত হবে এবং রাঙামাটি দেশ বিদেশে আরো বেশী পরিচিতি লাভ করবে।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions