সিএইচটি টুডে ডট কম, বিলাইছড়ি ( রাঙামাটি)। রাঙামাটির বিলাইছড়িতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৫ মার্চ)সকাল ১০ টায় হলরুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান - এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা এবং বীর মুক্তি যোদ্ধা শাক্যপ্রিয় বড়ুয়া।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফুল ইসলাম,শিক্ষা অফিসার নিখিলেশ চাকমা,থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলমগীর, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরুণ কান্তি চাকমা, ১ নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শামসুদ্দিন, উপজেলা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক শান্ত তঞ্চঙ্গ্যা, শিক্ষক পুতুল চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা ও অন্যান্য শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।
ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি সাংবাদিক, ছাত্র - শিক্ষক, নারী- শিশু, ডাক্তার,সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। এছাড়াও ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র স্বাধীন
বাংলাদেশ।