শনিবার | ২০ এপ্রিল, ২০২৪
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে

জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি না দেয়ায় অসন্তোষ বন কর্মচারীদের মাঝে

প্রকাশঃ ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০২:৩৩:২৪ | আপডেটঃ ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:২২:৫৯  |  ৯৪৯
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। বন বিভাগের পদোন্নতি নিয়ে অসন্তোষ দিন দিন দানা বাঁধছে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সারা দেশে ১ হাজার ৫শত বন প্রহরীর তালিকায় দীর্ঘ বছর চাকুরী করেও পদোন্নতি না পাওয়া এবং জৈষ্ঠ্যতার অজুহাতে জুনিয়ররা পদোন্নতি পাওয়ায় এই অসন্তোষ আরো ঘনিভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন দেয়া পদোন্নতির তালিকা বাদ করে চাকুরীতে যোগদানের তারিখ হতে জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণ পূর্বক পদোন্নতি তালিকা প্রকাশের জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ বনপ্রহরী কল্যাণ সমিতি রাঙামাটির নেতৃবৃন্দ।

জানা গেছে, জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির তালিকা না হওয়ায় একই পদে কাজ করে ও ১৯৮৫ সালে যোগদানকারী বন প্রহরীরা ২০১৭ সালে যোগদানকারীদের পদোন্নতির তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় বন প্রহরীদের মাঝে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। অনেক বন প্রহরী তাদের চাকরী থেকে অবসরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

কর্মরত বন প্রহরীদের সাথে আলাপ কালে জানা গেছে দীর্ঘ বছর চাকুরী করার পর ও অনেক কর্মকর্তা তাদের পরিবারের চাকরী শেষে এসে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এমন একটি তালিকা বনপ্রহরীদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। কর্মচারীদের পদোন্নতির বিষয়ে ২০১০ ও ২০১৬ সালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর পর দুটি পত্র আসলেও বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় এই অসন্তোষের মুল কারণ বলে মনে করেন বন প্রহরীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর চাকুরী জীবনে বন বিভাগে ফরেস্ট গার্ড হয়েও নানা দায়িত্ব পালন করতে হয়। বড় কর্তাদের নির্দেশেই কর্মকর্তাদের কাজ করতে হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কখনো বিট কর্মকর্তা, কখনো রেঞ্জ সহকারী, কখনো বা কম্পিউটার অপারেটর। শুধু তাই নয়, কখনো কখনো তাদের হতে হয় নৌকার মাঝিও। এ ছাড়া বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষার দায়িত্বের পাশাপাশি বিরান ভূমিতে বাগান সৃজনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের ওপরে। এসবের পাশাপাশি বন খেকো ও গাছ চোর ঠেকাতে প্রতিনিয়ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর বনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সঙ্গে নিয়ে বন পাহারা দিতে হয়। সংঘবর্ধ গাছ চোরদের হামলায় অনেক বন প্রহরীর প্রাণ গেছে বলে জানান তারা। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গনে আঞ্চলিকতার কারণে আরো বেশী কষ্ট বলে জানান তারা।

বাংলাদেশ বনপ্রহরী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে এবং ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. রকিবুল হাসান মুকুল বন প্রহরী থেকে ‘ফরেস্টার’ পদে পদোন্নতির জন্য চাকরি বহি ও হালনাগাদ তথ্যাদি প্রেরণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দেন।’ চিঠিতে ‘কোনো কর্মচারীর চাকুরি স্থায়ী/নিয়মিত করা না হয়ে থাকলে চাকুরি স্থায়ী/নিয়মিত করে চাকুরি বহিতে এন্ট্রি প্রদানপূর্বক হালনাগাদ চাকুরি বহি প্রেরণ করতে ওই বছরের ২০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি।’

বন প্রহরীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে নতুন প্রকাশিত জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে তালিকাতে যারা ২০১৭ সালের যোগদানকারী তালিকায় প্রথমে রয়েছে এবং বন প্রহরীরা যদি ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৫ সালে যোগদানকারীরা তাদের পেছনে পড়ে গেছে।
বন অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক (সংস্থাপন) মোঃ রফিকুল হাসান মুকুল (২৭/৪/২০১৬) তারিখে স্বাক্ষরিতে পত্রে বলা হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজস্বখাতে যোগদানকৃত বন প্রহরীদের চাকুরী নিয়মিত ও স্থায়ী করণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

নির্দেশনায় বলা রাজস্বখাতে এডহক ভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারীদেরকেও একইভাবে নিয়মিতকরণ করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত কর্মচারী এবং একহক ভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারীদের জৈষ্ঠ্যতা নিয়মিত করণের তারিখ হতে গণনা করার বিধান থাকায় নিয়মিত করণের তারিখ ভিন্নতার কারণে জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দিশনায় বলা হয় (ক) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই ৩০ মে ২০১৬ তারিখের মধ্যে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভা আহবান করে সুপারিশ প্রস্তুত করে রাখবেন। (খ) নিয়মিত করণের আদেশ জারী করতে হবে আগামী ১২ জুন ২০১৬ তারিখ কোন ভাবেই ১২ জুন ২০১৬ তারিখের আগে বা পরে আদেশে জারী করা যাবে না। (গ) সারা দেশ থেকে একই তারিখে একযোগে আদেশ জারী করা হলে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে কোন জটিলতা থাকবে না। কিন্তু কেন্দ্রের দেয়া এই পত্রের কোন নিয়ম কানুন মানা হয়নি বলে জানান।

বাংলাদেশ বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল হাই হাই ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহমদ আলী স্বাক্ষরিত চাকুরী যোগদানের তারিখ হতে জৈষ্ঠ্যতা নির্ধারণ পূর্বক পদোন্নতির আবেদন করা হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সিসিএফ এর কাছে মার্ক করে আবেদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বন মন্ত্রীর নির্দেশনা ও অমান্য করেন বলে কর্মচারীরা উল্লেখ করেন।

দীর্ঘদিন বন বিভাগের নিয়মিতকরণ করা না হলেও হঠাৎ করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রনয়ন করে সিনিয়রদেকে জুনিয়র আর জুনিয়ারদেরকে সিনিয়রের তালিকা প্রনয়ন করে বয়স্ক বন প্রহরীদের মুখে চুনকালী দিয়ে নিজেদের নিজেদের মাঝে দ্বন্ধ তৈরী করে দেয়ার দায়িত্ব কে নেবে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাঙামাটি বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী বিধি বিধান অনুযায়ী এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।  এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন চিঠি আসে তখন যে কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তিনিই ভালো বলতে পারবেন কেন তিনি নিয়মিতকরণ করলেন না। তিনি যদি নিয়মিত করতেন তাহলে আজ এই সমস্যার উত্তোলন ও অসন্তোষ হতো না। এখন আমিতো তখন কার দায়িত্ব নিতে পারবে না।  সেই বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।

বন বিভাগ অধিদপ্তরের সিসিএফ এডমিন হুসাইন মোহাম্মদ নিশাদের কাছে বন অধিদপ্তরের ফরেষ্ট গার্ডদের খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিধি বিধান অনুযায়ী তালিকা প্রনয়ন করেছি। এই তালিকা যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয় তাহলে তারা আপিল করতে পারবে। আপেলের মাধ্যমে যদি সঠিক কাগজ পত্র দেখাতে পারে তাহলে এর সুহারা করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আসলে নিয়মিত করণ বিষয়টি হচ্ছে অফিসিয়াল বিষয়। আগে হয়নি এখন হয়েছে তাই হয়তো খসড়া তালিকা টি দেয়া হয়েছে। এই তালিকার বিপরীতে আপিলের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের সব সময় ভালোবাসা রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অন্যায় আচরণ করা হবে না।

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions