বুধবার | ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

মুজিব বর্ষে জুরাছড়ি পাংখোয়া জনগোষ্ঠী ঘরের উঠানে নিরাপদ পানি পেলো

প্রকাশঃ ০১ জানুয়ারী, ২০২১ ০৬:৪৩:৫৯ | আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:০৯:৫০  |  ৭৯৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, জুরাছড়ি (রাঙামাটি)। রাঙামাটি জুরাছড়ি উপজেলার দক্ষিনে দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভূয়াতলীছড়া (স্থানীয় ভাষায় গন্ডাছড়া) গ্রাম। উপজেলা থেকে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পাহাড়ি উচুঁ-নিচু পথ বেয়ে যেতে হয় এই গ্রামে। ১৯৮৪ সাল থেকে গ্রামে পাংখোয় সম্প্রদায়ের বসবাস। এই গ্রামে সবাই জুম চাষের ওপর নির্ভর। ৮০ বছর বয়সী দুমদুম্যা মৌজার হেডম্যান সমূর পাংখোয়া বলেন, ঘরের ব্যবহায্য ও নিরাপদ পানির একমাত্র ভরসা ছড়া। এই ছড়ার পানি আনতে পাহাড়ের উচু টিলা ৯ হাজার ফুট পাহাড়ের নিচে নামতে হয়। এতে সময় কেটে যেত ২ থেকে আড়াই ঘন্টা প্রায়।
 
এই দৃশ্য এখন বদলে গেছে। জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ”গন্ডাছড়া পাংখোয়া পাড়াই পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ” প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘরে ঘরে পোঁছে দেওয়া হয়েছে নিরাপদ পানি লাইন। জুমের কাজ শেষে সাচন্দে সবাই গোসল ও রান্নাবান্না করছে। তাদের চোখে-মূখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাংখোয়া পাড়ার ২৪ হর্ষের মেশিন স্থাপনে করা হয়েছে। সেখান থেকে নয় হাজার ফুট পাহাড়ের নিচে ছড়ার একটি কূপে মোটর স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে উচু টিলা বেয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় এই পানি লাইন। গ্রামের সর্বচ্চ উচু টিলাই এক হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দু‘টি ট্যাগ বসানো হয়। এছাড়া গীজায় উপাসনালয়ের সুবিধার্থে বসানো হয় একই ধারনক্ষমতা সম্পুর্ন একটি ট্যাগ। এখানে সরাসরি পানি এসে জমা হয়। এসব ট্যাগ থেকে প্রতিটি ঘরে ঘরে পানি লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

হাংকিপ পাংখোয়া জানান, এখন আমরা বহু সূখে আছি। পানির চিন্তা করতে হচ্ছেনা। ঘরে বসেই পানি পাচ্ছি। পানির কষ্টের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পদায়ন বহু শিক্ষক দ্রুত বদলি হয়ে যায়।

ভুয়াতলীছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা লালপার পাংখোয়া জানান, জম্মে পর বুঝার বয়স থেকে দেখে আসছি-পাহাড়ের চুড়ার নিচে থেকে পানি নিয়ে আসার কত যে কষ্টকর। তার মধ্যে আবার জুমে কাজ করা। ঘরের উঠানে পানি পাবো এটি শুধু স্বপ্নে মত ছিল আমাদের। কাজ শেষে ঘরে গোসল ও রান্না-বান্নার কাজ সহজে আমরা করতে পারছি। এটি আমাদের জন্য কত যে প্রাপ্তি ও আনন্দের বুঝানোর অপেক্ষা রাখে
না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, দুমদুম্যা ইউনিয়নের পাংখোয়া সম্প্রদায় ৩৫ বছর ধরে পানির কষ্টে ভোগছিলেন। পাহাড়ের নিচ থেকে একবার পানি আনতে ৪-৫ ঘন্টা সময় লেগে যেত। সেখানে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাড়াই পানি সংযোগ করে দিয়েছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানান, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের র্দীঘ দিরে প্রত্যাশা এবার পূর্ন হলো। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মুজিব বর্ষে উপলক্ষে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিদের নিরাপদ পানিয় জল সংকট মোকাবেলায় সহায়তা প্রদান করতে।

সম্প্রতি এই পানি লাইন বড় দিন উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের প্রতিনিধি জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যানন চাকমা। এসময় দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা, প্রবিন হেডম্যান সমূর পাংখোয়া, ওয়াড সদস্য পূন্য রঞ্জন চাকমা, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য সাপনেম পাংখোয়া, সাংবাদিক সুমন্ত চাকমা, ঠিকাদার রিটেন চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পানি পাওয়ার আনন্দে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions