শনিবার | ২০ এপ্রিল, ২০২৪
পথে বসার উপক্রম বাঁশ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের

পরিবহনের অনুমতি না পাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ৬ কোটি টাকার বাঁশ

প্রকাশঃ ০১ মে, ২০২০ ০৭:১৭:৩৪ | আপডেটঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:২৫:২৭  |  ২২২৬
হিমেল চাকমা, রাঙামাটি। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি টাকার বাঁশ। পথের ধারে বা নদীর পাড়ে কড়া রোদে পুড়ে, বষ্টিতে ভিজে এসব বাঁশগুলো নষ্ট হচ্ছে। বন বিভাগ বাঁশ পরিবহনের অনুমতি বন্ধ রাখায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাঁশ ব্যবসায়ীরা । এছাড়া বাঁশ সরবরাহ ও আহরণ বন্ধ থাকায় অন্তত ৩০ হাজার অধিক শ্রমিক খাদ্য সংকটে পড়েছে।

কুতুকছড়ি বাজার এলাকা ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় মাওরুম নদীর পাড়ে তুলে রাখা বাঁশগুলো নষ্ট হচ্ছে। একইভাবে নানিয়াচরচর উপজেলার  ঘিলাছড়ি, ১৭ মাইল ও কাউখালী ছড়া ও চেলাছড়া এলাকায় রাখা বাঁশগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া কাচালং নদীর লংগদুর উপজেলা ফুড়োমূখ এলাকায় রাখা বাঁশগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব বাঁশ বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা বলে ব্যবসায়ীরা জানান। বাঁশের মধ্যে রয়ে মুলি, মিটিঙ্গা, ডুলু, পারবোয়া ও বাজ্জে বাঁশ।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেক ইউনিয়নের কাচালং নদীর লালু.কালু, নাবা, শঙ্কছড়ি ও আবালাংছড়া এলাকা প্রায় আড়াই লাখ বাঁশ নষ্ট হয়ে গেছে। নদীতে পানি ও শ্রমিক সংকটে এসব বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নে বাঁশ ব্যবসায়ীরা জানান, গত জানুয়ারি থেকে  মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রায় তিন লাখ বাঁশ কাটা হয়। পরে এগুলো পরিবহনের জন্য কুতুকছড়িতে আনা হয়।  এসব বাঁশ গত মার্চ মাস থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লাতে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ মার্চ রাঙামাটি শহরের বনরুপা এলাকা বনবিভাগের চারটি কার্যালয় পুড়ে যাওয়ায় সরবরাহের অনুমতি পাওয়া নিয়ে  বিলম্ব হয়। এর পর ২৪ মার্চ থেকে করোনা-ভাইরারসন আতঙ্কে রাঙামাটির শহরের বাইরে নিত্যপ্রায়োজনী পণ্য বহণকারী গাড়ি ছাড়া সব ধরণের যান চলাচলও  বন্ধ হয়।

রাণীর হাট ও কুতুকছড়ি বাঁশ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল রহিম বলেন, প্রতিদিন আনারস,মাছের গাড়ি যাচ্ছে কিন্তু আমাদের বাঁেশ গাড়ির অনুমতি মিলছে না। বাশ পচনশীল জিনিস এটা মানা হচ্ছে না।

তিনি বলেন সংশ্লিষ্ট বন বিভাগকে আগে রাজস্ব প্রদান করে আমরা বাঁশ কর্তনে যায়। প্রতি মুলি বাঁশে দিতে হয় ১৫০০ টাকা, ওরা বাঁশে ১৭০০ টাকা,  বাজ্জে বাঁশে ৬০০০ টাকা, মিতিঙ্গা বাঁশে ১৫০০ টাকা এবং টেংরা মুলি বাঁশে হাজার বাঁশে ৬০০ টাকা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বন বিভাগকে রাজস্ব দিয়ে বাঁশ কর্তন করা হয়। শ্রমিকরা বাঁশ কেটে এনে রাস্তার পাশে রেখে দিয়েছে কিন্তু  বাঁশ পরিবহনের জন্য বনবিভাগ অনুমতিপত্র দিচ্ছে না। এতে তারা কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন।

তিনি বলেন, প্রশাসন যদি ১০ থেকে ১২দিন বিশেষ সুযোগ দেয় তাহলে বাঁশগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা উঠে আসবে। তিনি বলেন, বাঁশের ব্যপক চাহিদা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তারা বাশ নিতে পারছেন না। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে যদি বাঁশ পরিবহনের অনুমতি দেওয়া না হলে এ বাঁশগুলো নষ্ট হলে সর্বশান্ত হয়ে যাবো।
 
বাঘাইছড়ি উপজেলা  করেঙ্গাতলী গ্রামের বাঁশ কাটা শ্রমিক  ইন্দ্র মনি চাকমা ও খেদারছড়া গ্রামে ধন কুসুম চাকমা বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাঁশ সংগ্রহের কাজ বাদ দিয়ে ঘরে ফিরে এসেছি। এখন প্রায় দুই মাস ধরে বেকার অবস্থায় ঘরে বসে আছি। আমাদের সংগ্রহ করা বাঁশগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিকদের আড়াই লাখের বেশি বাঁশ বনে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।



বাঘাইছড়ি পাহাড়ি বাঁশ ব্যবসায়ীর সমিতির সভাপতি রিজার্ভ চন্দ্র চাকমা বলেন, আমাদের কাচালং ও শিকজ নদীতে দুই লাখ বাঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কাচালং নদী ভেতরে আড়াই লাখ বাঁশ ইতিমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ৩০ হাজার বাঁশ কাটা শ্রমিক চরম খাদ্য সংকটে রয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মবর্তা রফিকুর জামান শাহ বলেন, মুলত করোনার লকডাউন চলার কারণে বাঁশ পরিবহন পাস বন্ধ রাখা হয়েছে।  আমরা ব্যবসায়ীদের ক্ষতির দিকটি চিন্তা ভাবনা করছি। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারব।

অর্থনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions