শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

সন্ধ্যা হলেই ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয় বান্দরবান

প্রকাশঃ ৩০ মার্চ, ২০২০ ১১:৩৬:১৮ | আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০২:২৮:৩১  |  ১২৬৭
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। সন্ধ্যা হলেই জনমানবশূণ্য ভূতুড়ে শহরে পরিনত হয় বান্দরবান পৌরশহর। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ, সেনাবাহিনীর গাড়ির শব্দ পাওয়া যায়। আর সড়ক ও দোকান, মার্কেটের লাইট বাতিগুলো জনমানবহীন শহরকে আলো দিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যা থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত,শহরে দিনে ও রাতে নেই কর্মচঞ্চলতার রূপ।

৩২.৫৫ বর্গ কিলোমিটার (৮,০৪৩ একর)আয়তনের বান্দরবান পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডসহ আশপাশে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই পৌর শহরে ৬-৭দিন আগেও দিনরাত পাহাড়ী-বাঙ্গালী এবং পর্যটকসহ হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম প্রতিদিনেই দেখা যেত। পাহাড়ী জেলা বান্দরবান দেশ-বিদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিতি পেলেও বর্তমানে  করোনা ভাইরাস আতংকে উধাও পর্যটক।

জেলার সকল পর্যটনস্পটগুলো পর্যটকশূণ্য, সড়কগুলো যানবাহনশূণ্য হয়ে ফাঁকা পড়ে আছে। দিনে জরুরী প্রয়োজনে গুটিকয়েক মানুষ ঘর থেকে বের হলেও সন্ধ্যায় চারদিকে শুনসান নীরবতা বিরাজ করছে গত এক সপ্তাহ।

সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার দুইদিন বসত  বান্দরবান সদরের হাটবাজার। দূর্গমাঞ্চলে পাহাড়ী-বাঙ্গালীরা পাহাড়ে, বাগানে ও জমির উৎপাদিত শাকসবজি, ফল বিক্রি করতে এবং পরিবারের জন্য বাজার সদাই করতে চলে আসতো জেলা সদরে, এতে পৌর শহর পরিনত হত বিপুল পরিমান পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায়। সেই শহর আজ নিরব-নিস্তব্ধ।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসনের অঘোষিত লকডাউনে ঘরবন্দি  হাজারো মানুষ। সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ। ঔষধের দোকানগুলো সকাল ১০ টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও মুদি দোকানগুলোতে বেঁচাকেনা হচ্ছে কম, ফলে এই পৌরশহর হারিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্যতা।

বান্দরবান সদরের বালাঘাটার বাসিন্দা মো:আবুল মিয়া জানান, পৌর শহরের শুনসান নীরবতা-নিস্তব্ধতা পরিস্থিতি দেখে আমার ৪০-৫০বছর আগের কথাই মনে পড়ে যায়। তিনি বলেন, ৪০-৫০ বছর আগে বান্দরবান শহরে লোক সংখ্যা কম ছিল, উন্নয়ন মানে সুউচ্চ দালানকোটা, দামী গাড়ী, প্রশস্ত রাস্তা, দোকানপাট, আধুনিক যন্ত্রপাতি, দামী রেষ্টুরেন্ট কিছুই ছিল না, তখন সন্ধ্যা হলেই শহর নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে যেত, এখন সবকিছু আছে, কিন্তু করোনা রোগের কারণে আজ একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা সদরের বাসিন্দা শহীদুর রহমান বলেন, করোনা রোগ মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি করেছে, যা ভাবতেও কষ্ট হয়। সকলের ঘরে বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা ঘরে বসে টিভি, মোবাইল, ইন্টারনেট আর ফেইসবুকে নিজের মত করে সারাদিন সময় কাটাচ্ছে, কোথাও নেই কোন খেলাধুলা, গল্প আর আড্ডা। তিনি আরো বলেন,শহরে রাজারমাঠ, স্টেডিয়াম, স্কুলমাঠ, এলাকা, পাড়ার মাঠগুলো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোর, তরুণ ও যুবকেরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকলেও এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তরুণ থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত সকলের মুখে এখন একটিই কামনা সৃষ্টিকর্তা যেন দ্রুত করোনা ভাইরাস ও এই বন্দি পরিস্থিতি থেকে সকলকে মুক্ত করে দেয়।

এদিকে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা:অংসুইপ্রু মারমা বলেন, দেশে অনেকস্থানে করোনার রোগী পাওয়া গেলে ও বান্দরবানে কোন করোনার রোগী সনাক্ত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বান্দরবানে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বান্দরবানে কোয়ারাইন্টেনে রাখা হয়েছে এবং বর্তমানে বান্দরবানে ১৫২ জন  কোয়ারাইন্টেনে রয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা:অংসুইপ্রু মারমা  আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সাময়িকভাবে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।

বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions