শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪

বুদ্ধিজীবি দিবসে অপরাজিতার ব্যাতিক্রমী কর্মসুচীর আয়োজন

প্রকাশঃ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:১৪:৩৯ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ১০:৪৭:০৯  |  ১০২৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাঙামাটিতে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করেছে রাঙামাটির উদীয়মান নারী সংগঠন অপরাজিতা।  বিকালে শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন (পুরাতন কোর্ট) শহীদ এম. এ.  আলীর সমাধিসৌধ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অপরাজিতা ও জীবন এর সদস্যরা।

এদের মধ্যে
এম. আবদুল আলীঃ একজন বিস্মৃত সিভিল সার্ভেন্ট ও একজন বিস্মৃত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের  বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা যা আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। অগনিত সূর্যসন্তানের আত্মত্যাগের ফলে পাওয়া যে স্বাধীনতা, সেই সব মহাপ্রাণদের ক’ জনের খবরই বা আমরা রাখি! কত জনই তো হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। তেমনি একজন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এম.আবদুল আলী।

এম. আবদুল আলী ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার মকসেদপুর থানার বালিয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস ( ই পি সি এস) এ যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি যোগদান করেন সাব-ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) তথা মহকুমা প্রশাসক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার রাঙামাটি মহকুমায়। তিনি মহকুমার প্রধান হাকিমও ছিলেন।

৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর পরই রাঙামাটিতে মুক্তিযুদ্ধের  প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। গড়ে উঠে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ নিয়মিত জেলা প্রশাসক এইচ  টি ইমাম ও মহাকুমা মাজিস্ট্রেট আবদুল আলীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন। আবদুল আলী এখানকার মুক্তিকামী ও সংগ্রামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের জন্য যুদ্ধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। জেলা সদরের পুলিশ লাইন ও স্টেশন ক্লাবে ছাত্র, যুবক ও আপামর জনসাধারণের জন্য যুদ্ধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া তিনি রাঙামাটিতে স্থাপিত উপ-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল চট্টগ্রাম ও অগ্রবর্তী ঘাঁটির সাথে যোগাযোগ।

১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আবদুল আলীর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তায় ভরে কাপ্তাই লেকে ফেলে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে এই দেশপ্রেমিক মহাপ্রাণের স্মৃতি অম্লান করে রাখার উদ্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাঙামাটি শহরে অবস্থিত কায়েদে আজম মেমোরিয়াল একাডেমীর নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবদুল আলী একাডেমী নামকরণ করা হয়।
২০১৬ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক জয়ী এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁকে স্মরণ করতেই এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
জানা যায়,
“প্রথমে তাকে ইট ভাঙ্গার কাজ দেন পাকিস্তানী সৈন্যরা। এরপর তাকে দিয়ে কুলির কাজ করাতে থাকে। শ্রমিকদের মতই খাটাতো তাকে। ১২ দিনের বন্দি অবস্থায় তার প্রায় পুরো শরীরই ক্ষত- বিক্ষত করে ফেলা হয়েছিলো। পাকিস্তানী সৈন্যদের অত্যাচারের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ইট দিয়ে তার দাঁত গুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিলো। তার হাতের নখগুলো উপরে ফেলা হয়েছিলো। এক পর্যায়ে পাকিস্তানী হায়েনারা আবদুল আলীর হাতের আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত কেটে দিয়েছিল।

আজ রাঙামাটির জন্য রাখা তথা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করে তাঁর বীরত্ব ও গৌরবময় স্মৃতিকে স্মরণ করলো সংগঠনের কর্মীরা।

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions