মঙ্গলবার | ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

আমার চোখে দেখা একজন জেলা প্রশাসক

প্রকাশঃ ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:৩৩:২৩ | আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:৪৮:১৮  |  ২৯২৭
হিমেল চাকমা, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিএইচটি টুডের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যায় রাঙামাটি  জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনর রশীদকে নিয়ে একটি লেখার অনুরোধ করলেন পোর্টালটির সম্পাদক ফজলুর রহমান রাজন। কথা দিয়েছি লিখব।

কিন্তু লেখাটি কি দিয়ে শুরু করবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।  তাঁর তো অনেকগুলো ভাল দিক আমার চোখে পড়ে প্রতিনিয়ত। তাই তাঁর ভাল দিকগুলো লিখতে হয়। কিন্তু কোনটার কথা লিখব এ চিন্তায় অনেক দিন পার করেছি।
সাধারণত  কাউকে  ভাল বললে এখন তেল বলা হয়! বুকে হাত দিয়ে বলছি আমি তেল দিচ্ছি না।  তাঁর কিছু ভাল দিক তুলে ধরছি।

দিনটি মনে নেই। বিকাল বেলা। বৃষ্টি শেষে সুর্যের দেখা মিলেছে। বনরূপার দিকে যাচ্ছিলাম। দেখি  রাঙামাটি ডিসির গাড়িটি কল্যাণপুর টিএনন্ডির মাঝামাঝি স্থানে ফুটপাটে দাঁড়িয়ে আছে। খাড়া রাস্তা দিয়ে পাহাড়ে বেয়ে নিচে নামছিলেন ডিসি। তখন সবে মাত্র নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কৌতুহল বশত বাইক থামিয়ে আমিও ডিসিকে অনুসরণ করতে থাকি। গিয়ে দেখি পাহাড়ের নিচে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সাথে কথা বলছিলেন।

এখনো মনে আছে, ডিসির প্রশ্ন ছিল আপনাদের ভয় করে না? পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ছিল এলাকাটি। কোথাও ধসেও যাচ্ছিল মাটি। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল কোথাও। ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীরা যেন ডিসিকে পাত্তাই দিচ্ছিল না।

আমি নিশ্চিত ছিলাম, কেউ তাকে ডিসি মনে করেনি। এলাকাটি পাহাড়ি অধ্যুষিত। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল উনি কে? বলি ডিসি। তবুও যেন বিশ্বাস হয় না। কারণ অতীতের ডিসিরা তো এমন ছিল না। তাদের সাথে পুলিশ থাকত। বর্তমান ডিসি একেবারে সাধারণ। পুলিশও ছিল না তাঁর সাথে।

সেখানে অনেকের সাথে কথা বলেন। পাহাড় ধসের সতর্কতা পেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্যা থাকলে তাকে জানানোর জন্য বলেন।  আসলে এটি লোভ দেখানো ছিল না। এটিই ডিসি মানুষটির স্বভাব। অর্থাৎ কাজের লোক। নতুন ডিসি আমাকেও চিনত না।  সে ঘটনাটি ছিল আমার দেখা প্রথম।

এরপর রাঙামাটি মাটি ও মানুষের মঙ্গলের জন্য কত কিছুই না করলেন।  ১০/১১ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের অভিজ্ঞতায় বলব অতীতের কোন ডিসিই বর্তমান ডিসির মত ছিলেন না।

তিনি কর্মস্থলে এসে একেবারে মানুষের সাথে মিশে যান। প্রতি বুধবার যেন বাধ্যতামুলক গণ শুনানী করেন। সেখানে গরীব দুঃখী মানুষের উপকার করেন। পাহাড়ি কি বাঙালী কেউ তাঁর কাছে পর নয়। অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টি সম্পন্ন  ব্যাক্তিটি দুহাত উজাড় করে দান করেন মানুষের কল্যাণে।

প্রতিদিন কত না ভাল কাজ করেন তার চিত্র প্রতিদিন চোখে পড়ে। কিছু চিত্র আনন্দে চোখে পানি নিয়ে আসে।

প্রবল বর্ষণে যখন আবহাওয়া অফিস যখন পাহাড় ধসের সতর্ক বার্তা দেয় তখন প্রাণহানী রোধে নিজেই ছুটে চলেন ঝুঁকিপূর্ন এলাকায়। কত কিছুই না করলেন সবই তো আমাদের চোখের সামনে। কোন লোভ দেখানো নয়।  



ডিসির আরেকটি কাজ এখনো মনে পড়ে। দিনটি ছিল এ বছর ৮ জুলাই। সকালেই বৃষ্টি শুরু হয়। এটি বাড়তে থাকে। পাহাড়ি ঢলে পানি ধবস নামাচ্ছে পাহাড়ে। পাহাড়ি ছড়ার পানির তীব্র  স্রোতে ভাঙছে ছড়ার পাড়। এতে ঘাগড়া কলাবাগানে সবার চোখের সামনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের অংশ ।

একের পর এক ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল সড়ক বিভাগের শ্রমিকরা। কাজ হচ্ছিল না। ডিসি সকাল সকাল ছুটে গেলেন ঘটনাস্থলে। আবিস্কার করলেন সড়ক রক্ষার পথ। অফিসে ফিরে পোষাক পরিবর্তন করে ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম আর শ্রমিক নিয়ে আবার হাজির হলেন কলাবাগানে। নির্দেশ দিলেন ছড়ার গতিপথ পরিবর্তনে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেও ছড়ায় নেমে পড়লেন শ্রমিকদের সাথে। তাকে দেখে স্থানীয় অন্যরাও নেমে পড়লেন ছড়ার গতি পরিবর্তনের কাজে।
প্রকৃতি যেন ডিসির  প্রচেষ্টার কাছে হার মানতে বাধ্য হল। এ যেন অসম্ভবকে সম্ভব করা। বাঁধা পেয়ে ছড়ার পানি নিজে নিজে তার পথ আবিস্কার করল।  এরপর আনা হল দুটি চেইন স্কেভেটর। অনবরত পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটি পাথরগুলো সরাচ্ছে এ মেশিন দুটি। ফলে নিশ্চিত ধসের কবল থেকে রক্ষা পেল সড়কটি। কাজ করার সুযোগ পেল সড়ক বিভাগ।

গত বছর ৬ মার্চ জেলা প্রশাসক হয়ে রাঙামাটি আসেন একে এম মামুনুর রশীদ । এসেই মিশে যান সাধারণ জনগণের সাথে। শুনেন দু:খ দুর্দশার কথা। করেন সমাধানের চেষ্টা। নিরহংকার এ ব্যাক্তি খুব সহজে মিশতে পারেন মানুষের সাথে।

এছাড়া জেলা প্রশাসক রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজারে শিশু পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পলওয়ে পার্ক এর মত বিকালে জমে উঠে শিশু পার্কটি। 

কাপ্তাই হ্রদ বেদখল রোধে  ডিসি ছিলেন কঠোর অবস্থানে। রক্ত চুক্ষু উপেক্ষা করে অনেক অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

এসব ভাল কাজের কথা বললে শেষ করা যাবে না। কখনো বা মনেই হয় না তিনি জেলা প্রশাসক।  যার মাঝে দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক, নেতার গুণাবলি সবই বিদ্যমান। অনেকের কাছে তিনি হয়তো অপ্রিয় ব্যাক্তিও হতে পারেন। তবে তিনিই আমার চোখে এ পর্যন্ত সেরা জেলা প্রশাসক।


রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions