বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪
রাজধানীতে আদিবাসী ফোরামের সংবাদ সম্মেলন

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থমকে আছে : সন্তু লারমা

প্রকাশঃ ০৩ অগাস্ট, ২০১৯ ০৬:২৮:৪২ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০১:০৩:২১  |  ৩২২০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আগামী ৯ আগষ্ট জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করতে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে রাজধানীতে আজ শনিবার  সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার সুন্দরবন হোটেলে সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় অনুষ্ঠিত হওয়া এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমা। আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নোমান আহমদ খান, রিচার্স এন্ড ডেভলপমেন্ট কালেক্টিভ এর সাধারন সম্পাদক ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট এক্সপার্ট মেম্বার জান্নাতুল ফেরদৌসি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ, খাসিয়া নেতা এন্ড্র সুলেমার প্রমুখসহ আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।

মূল বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় ওরফে সন্তু লারমা বলেন, পাহাড়ী মানুষ  সমূহের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার,আদিবাসী জাতি সমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করাই হলো আদিবাসী দিবস উৎযাপনের মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশে এই কাজগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের দরুণ রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিবস পালিত না হওয়ার আক্ষেপ ও দুঃখের বহিঃপ্রকাশও করেন পাহাড়ের এই নেতা।

সন্তু লারমা আরো বলেন, পাহাড়ীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভূমি জবরদখল ও তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার হীন উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক হামলা, আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ,  নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারীর উপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২১ বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুধু ধীরগতি নয়, অনেকটা থমকে আছে আর পাহাড়ের মানুষ সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দুর্বিসহ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। সরকার বার বার সমতলের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। এই বিষয়ে ন্যূনতম পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো লক্ষণ নেই।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরপরও দেশের ৩০ লক্ষাধিক পাহাড়ী  জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবন ধারাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং ‘পপুলেশন ট্রান্সফার’ ও ক্রমাগত উচ্ছেদের ফলে নিজভূমি থেকে বাস্তুচূত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী-বরগুনা, খাসিয়া অঞ্চলে সর্বত্র আদিবাসীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আদিবাসীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা এখন আত্মপরিচয়, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই গেরিলা নেতা।

এছাড়া মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটের নৃ ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় পাওয়া ১৪টি বিপন্ন ভাষার কথা উল্লেখ করেন তিনি। খাড়িয়া, কোড়া, সৌরা, মুন্ডারি,কোল,মালতো, খুমি,পাংখোয়া, রেংমিটচা,চাক,খিয়াং,লুসাই ও পাত্র ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলেও উল্লেখ করেন এই আদিবাসী নেতা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং এই ভাষা চর্চাকারী মানুষদের সংখ্যা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ক্রমাগত বঞ্চনার ফলেই এই বেহাল দশা বলেও অভিযোগ আদিবাসী ফোরামের সভাপতির।

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যেট এক্সপার্ট মেম্বার জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার। এই চেতনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রূপকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আদিবাসীদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
আইইডির নির্বাহী পরিচালক নোমান আহমদ খান বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যে কর্তব্য ছিল আর বর্তমান আদিবাসীদের যে হাহাকার বাস্তবতা বেশ বিপরীত। এসডিজির চলমান স্লোগান ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এই নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে প্রান্তিক আদিবাসী জনগনকে উন্নয়নের আলোয় নিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। সকল আদিবাসীর ভাষা ও পরিচয়কে স্বীকৃতি দানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নেরও দাবী জানান তিনি।

আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে আগামী ৪ আগষ্ট ২০১৯ ইং (আগামীকাল) সকাল ১০ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আলোচনা সভা, ৫ আগষ্ট সকাল ১০ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে প্রতি বছরের ন্যায় সমাবেশ, র‌্যালী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, ৭ আগষ্ট সকাল ১০ টায় ঢাকার ডব্লিউভি. এ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের যৌথ আয়োজনে আদিবাসী নারী বিষয়ক সেমিনার, ৯ আগষ্ট বেলা ২ টায় বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলায় ছাত্রসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ২৭ আগস্ট এএলআরডি ও ১০ টির অধিক সংগঠন মিলিতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিয়ে সেমিনার আয়োজন করবে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে।

উপস্থিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদানের পাশাপাশি আদিবাসী ফোরাম ও এর সহযোগী সংগঠন সমূহের আয়োজনে উপরোক্ত সিরিজ প্রোগ্রাম সমূহের সফলতা কামনা করে এবং পাহাড়ীদের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
জাতিসংঘ এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “আদিবাসী ভাষা চর্চা এবং সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন”।

এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions