সরকারের উদাসীনতায় হুমকির মুখে কাপ্তাই হ্রদ

প্রকাশঃ ২৫ মে, ২০১৮ ০৮:৪৫:১২ | আপডেটঃ ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:১৩:০৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা সঙ্কট। কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এর ফলে সৃষ্টি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ কৃত্রিম জলরাশির। হ্রদটি ঘিরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ গড়ে ওঠে নানামুখি সুবিধা ও সম্ভবনা। কিন্তু সৃষ্টির পর গত ৫৮ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। পড়েছে দখলের কবলে। ফলে বছরের বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলের পলি জমে এবং বসতিস্থাপনকারীদের নিক্ষেপ করা বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে হ্রদ হারাচ্ছে নাব্যতা। হ্রদ ঘিরে তৈরি হচ্ছে নৌ-পরিবহনসহ নানা সঙ্কট। বর্তমানে অস্তিত্বের সম্মুখীন এই হ্রদ। কিন্তু নির্বিকার সরকার। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা কাপ্তাই হ্রদকে রক্ষায় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে প্রস্তাবনা পাঠাবেন বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ড্রেজিং না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। নাব্যতা পুনরুদ্ধার না হলে হ্রদ ঘিরে তৈরি হওয়া সঙ্কটগুলোর  উত্তোরণ সম্ভব নয়। এজন্য দরকার কাপ্তাই হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিং। বিষয়টি নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।  
ওই সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা মো. আরফান আলী, হারুনুর রশিদ মাতব্বর, ব্যবসায়ী নেতা মো. আবু সৈয়দ, পর্যটন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে’সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদ দেশের বড় সম্পদ। কিন্তু হ্রদটিকে যত্রতত্র ব্যবহার, দখল করায় সঙ্কটাপন্ন করে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে নাব্যতা হারিয়েছে হ্রদের। ফলে নৌ-যোগাযোগসহ তৈরি হয়েছে নানামুখি সঙ্কট। এছাড়া প্রতিনিয়ত বর্জ্য নিক্ষেপে দূষণ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি।
তারা বলেন, কাপ্তাই হ্রদের গতিপ্রবাহ সচল ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং জরুরি। অথচ বিষয়টির প্রস্তাবনা দেয়া হলেও আজও নির্বিকার সরকার।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আসাদুজ্জামান বলেন, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা কমানোর কারণে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। অবৈধভাবে হ্রদের জমিতে বসতি স্থাপনের কারণে হ্রদের আকার সংকুচিত হচ্ছে। ওইসব স্থানে বসবাসকারী লোকজনের বর্জ্য নিক্ষেপে পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি শুস্ক মৌসুমে কমছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। প্রতি শুস্ক মৌসুমে হ্রদের রাঙামাটি সদর উপজেলার চেঙ্গী এবং লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিল ছাড়া হ্রদের মূল ধারার প্রায় অংশে তলানিতে গড়ায় পানি। অনেক স্থানে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় হ্রদের অংশ। আর হ্রদে অতিরিক্ত পানি কমায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে মারাত্মক ধস নামে। তখন ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রে রেশনিং পদ্ধতিতে উৎপাদন সম্ভব হয় কেবল ৩৫-৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ সময় হ্রদ দিয়ে বিভিন্ন রুটে বিঘœ ঘটে নৌযান চলাচল। ব্যাহত হয় হ্রদ থেকে পানি উত্তোলণ ও সরবরাহে।

জানা গেছে, এবার শুস্ক মৌসুমে এরই মধ্যে হ্রদের উজানে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইড়ির বিস্তীর্ণ জলাশয় শুকিয়ে পানির স্তর নেমে গেছে বহুদূরে। হ্রদজুড়ে জেগে উঠছে বিস্তীর্ণ ডুবোচর। বিভিন্ন অংশে জাগছে চরাঞ্চল। বর্তমানে জেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম। ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে নৌযান। এতে তৈরি হয়েছে নৌপরিবহন সঙ্কট।


সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions