আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাসে অর্ধ-শতাধিক খুন, ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে অবৈধ অস্ত্রধারীরা

প্রকাশঃ ২২ মার্চ, ২০১৯ ০৭:৪৪:২২ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৩:৪৫:০১
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। তিন পার্বত্য জেলায় আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাস-খুনোখুনি-অপহরণ আর চাঁদাবাজির জেলা হিসেবে খাগড়াছড়ির কুখ্যাতি অনেক পুরনো। আঞ্চলিক দলের আধিপত্য বিস্তার আর সশস্ত্র শাখার নিরাপদ প্রশিক্ষণ এবং কালেক্টর নিয়োগের প্রয়োজনে এটি সংক্রমিত হয়েছে পাশের জেলা রাঙামাটির দুটি উপজেলাতেও। এরমধ্যে নানিয়ারচর থেকেই আলোচিত সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র জম্ম হয়েছে ২০১৭ সালের নভেম্বরে। আর তখন থেকেই খাগড়াছড়ির সাত উপজেলা আর রাঙামাটির এই দুই উপজেলায় চলছে রক্তক্ষয়ী হত্যাকা-। খাগড়াছড়ির পাহাড়িদের মধ্যে বিশেষ করে চাকমা সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র তৎপরতা বেশি লক্ষ করা যায়। দুই জেলার সাত উপজেলায় গত সোয়া এক বছরে অর্ধ-শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বুলেটের আঘাতে। আঞ্চলিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি। পার্বত্য শান্তিচুক্তির আগে ও পরে টার্গেট কিলিংয়ের ক্ষেত্রে যাতে নিরীহ এবং অরাজনৈতিক মানুষ যাতে মারা না যান সেটি কিলার’রা মাথায় রাখতো।

কিন্তু ইদানীংকালের ঘটনাগুলোতে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার এবং ব্রাশ ফায়ারের ফলে টার্গেটের কাছে থাকা সাধারণ ও নিরীহ পাহাড়িদেরও প্রাণ দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এবং পেরাছড়া হামলায় নিহত ছয় জনের মধ্যে চার জনই নিরীহ। এছাড়া প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও পাহাড়িরা আঞ্চলিক দলের দুর্বৃত্তদের হাতে নানাভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাহাড়ে বইছে যেনো লাশের মিছিল।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এবং পেরাছড়ায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের দুই দফা হামলায় এঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলো, ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক এলটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সহ সভাপতি পলাশ চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী জীতায়ন চাকমা, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রূপন চাকমা, খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া এলাকার বাসিন্দা শন কুমার চাকমা ও বিএসসি প্রকৌশলী পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি গ্রামের ধীরাজ চাকমা। আহতরা হলো, পিসিপি কর্মী সোহেল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কর্মী সমর চাকমা ও সখীধন চাকমা।
দৃর্র্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি ব্রাশ ফায়ারে প্রাণ হারান আরো তিনজন নিরীহ ব্যক্তি। এরমধ্যে টেক্সটাইল প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমা ঢাকা থেকে নৈশবাসে নেমে স্বনির্ভরস্থ পানছড়ি স্টপেজে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। মেধাবী এই প্রকৌশলীর বাড়ি পানছড়ি উপজেলার উগলছড়ি গ্রামে। মূলত: ঈদ উল আযহার বন্ধে পরিবার ও স্বজনদের সাথে সময় কাটানোর জন্য তিনি বাড়ি ফিরছিলেন।
নিহত রুপন চাকমা স্বনির্ভর এলাকার বাসিন্দা সুগত চাকমার সন্তান। দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজের উন্মুক্ত শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়রত এই ছাত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফটোকপি করার জন্য বাসা থেকে বেরোবার মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় লাশ হয়ে যান।

আর মহালছড়ি উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে কর্মরত জিতায়ন চাকমা ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন স্বনির্ভর বাজার থেকে শাক-সবজি কেনার জন্য। সন্ত্রাসীদের বিষাক্ত বুলেট তাঁর বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সা: সম্পাদক তপন ত্রিপুরা জানান, নিহতদের মধ্যে পিসিপি নেতা তপন চাকমা’র বাড়ি মহালছড়ি উপজেলা চোংড়াছড়ি গ্রামে। ডিওয়াইএফ নেতা পলাশ চাকমার বাড়িও একই উপজেলার মনাটেক গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’-এর সশস্ত্র শাখার প্রধান এবং নানিয়ারচর উপজেলার দাপটশালী কমা-ার তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে ‘ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’ নামে আরেকটি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেই অস্থির হয়ে উঠে খাগড়াছড়ি জেলা এবং রাঙামাটির দুটি উপজেলা। এসব উপজেলায় আগে সংস্কারপন্থী ‘জনসংহতি সমিতি এবং’ ‘ইউপিডিএফ’-এর মধ্যকার সম্পর্ক ভালোই ছিল। ইউপিডিএফ থেকে ২০১৩ সালে বহিস্কৃত তপন জ্যোতি চাকমা প্রকাশ বর্মা ইউপিডিএফ-এর সামরিক কমান্ডার থাকাকালীন সময়ে পার্বত্য এলাকায় বিশেষত নানিয়াচরসহ রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে ব্যাপক আধিপত্য গড়ে তুলেছিল। দল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার দীর্ঘদিন পর তপন জ্যোতি চাকমা ২০১৭ সালে তপন জ্যোতি চাকমা নতুন দল নিয়ে মাঠে নামলেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত খাগড়াছড়িসহ  অন্যান্য এলাকায় সংস্কারপন্থী জনসংহতির সাথে ইউপিডিএফ-এর দৃশ্যত কোন ঝামেলা ছিল না। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দুই দলের দুই প্রার্থী মাঠে নামলেও সংঘাত হয়নি। সেই নির্বাচনের পরে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও এই দুটি দল ভাগাভাগির ভিত্তিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। কিন্তু বহিষ্কৃত বর্মাকে দল গঠনে আস্কারা প্রদানের সন্দেহ থেকে প্রথমে দুই দলের সশস্ত্র শাখার মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ এবং পরে তা ক্রমে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে।

ইউপিডিএফ’র সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত মূল সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনের ২০ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক খুন হয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসেই রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলায় ইউপিডিএফ-এর দুই কর্মী ও সমর্থক সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা ও অনিল বিকাশ চাকমা খুন হন। এই হত্যকান্ডের রেশ না কাটতেই ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সকালে খাগড়াছড়ি জেরা সদরের নিজ বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে খুন করা মিঠুন চাকমাকে। পিসিপি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউপিডিএফ’র অন্যতম শক্তিশালী-জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম। এই ঘটনার এক মাস বিরতিতে একই বছরের ১৭ ফেরুয়ারী খাগড়াছড়ি জেলা সদরের রাঙাপানি ছড়ায় দীলিপ চাকমা খুন হন। এই ঘটনার তিন দিন পর জেলার দীঘিনালা উপজেলার জামতলীকে গুলি করে সাইন চাকমা সুপারা নামে এক ইউপিডিএফ কমীর্কে হত্যা করা হয়। মার্চ মাসে খাগড়াছড়ি সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়িতে নতুন মনি চাকমা নামে এক কর্মী মারা যায়। এপ্রিল মাসে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়িতে সূর্য বিকাশ চাকমা (৪৫) নামে এক সমাজ কর্মী মারা যায়। নিজেদের নেতা বা কর্মী না হওয়া সত্বেও ইউপিডিএফ তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। একই সপ্তাহে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হন ইউপিডিএফ সংগঠক নতুন কুমার ত্রিপুরা (৪০)। ২২ মে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় উজ্জ্বল কান্তি চাকমা ওরফে মার্শাল (৫৫) নামে আরো এক সাবেক কর্মী প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারান। এছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায় নিজ বাড়িতে ফেরার পথে জেরান চাকমা নামের সাবেক এক পিসিপি কর্মীকে দীঘিনালা বাস স্টেশন থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেই থেকে এখনো নিখোঁজ জেরান।

একই বছরের গত ৪ মে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বেতছড়ি এলাকায় প্রতিপক্ষের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের প্রতিষ্ঠা সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন নিহত হয়। ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপকে দায়ী করেছিল।

এদিকে ২৮ মে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সঞ্জীব চাকমা (৩০),অতল চাকমা(৩০) ও স্মৃতি চাকমা (৫০)কে ব্রাশ ফায়ার করে খুন করা হয়। এএকাধিক ঘটনায় নানিয়াচর, বাঘাইছড়ি ও পানছড়িতে কিরণ চাকমা, জনি তঙ্গগ্যা ও সুনীল বিকাশ চাকমা নামে তিন ইউপিডিএফ কর্মী মারা যায়। এছাড়া হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী অপহরণের দীর্ঘ সময় পর মুক্তি পায়। ঘটনাটি দেশে-বিদেশে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে। গত সপ্তাহে দীঘিনালা উপজেলা সদরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ হারান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু নামের ইউপিডিএফ’র সাবেক এক কালেক্টর।

সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি বাঘাইছড়ি উপজেলার ৯ কিলো এলাকায় সন্ধ্যায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হন প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হান্নান, পোলিং অফিসার আল-আমিন, মো: আমির হোসেন, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য (ভিডিপি) সদস্য বিলকিস আক্তার, আসনার সদস্য-মিহির কান্তি দত্ত, জাহানারা বেগম এবং গাড়ীর হেলপার মন্টু চাকমা ।
হামলার সময় তিনটি গাড়ীতে প্রায় ২৪ জন দায়িত্বরত কর্তকর্তা,পুলিশ ও আনসার সদস্য ছিল বলে জানায় আহত পুলিশ সদস্য।
এসব হত্যাকান্ডের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- জেএসএস-(এম এন লারমা) ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। অভিযোগ অস্বাকীর করে জেএসএস (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা জানান ,‘ ইউপিডিএফ এর আভ্যন্তরীণ দ্বন্দে¦র কারণেই এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে।

অপরদিকে একই সময়ে খাগড়াছড়িসহ নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িতে পাল্টা হামলায় জেএসএস (এমএন লারমা) এর র্শীর্ষ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলীয় প্রধানসহ ১১ জন মারা যায় । ২০১৮ সালের ৩ মে রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এড. শক্তিমান চাকমা খুন হন। শক্তিমান চাকমা ছিল দলটির অন্যতম প্রধান নেতা। শক্তিমানের নানামুখী যোগ্যতার ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের নীতি-নির্ধরকদের সাথেও যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল জনসংহতি সমিতির এই অংশের সাথেও। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি আসনের নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিলেন। এ ঘটনার দুই দিনের মাথায় শক্তিমান চাকমার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গিয়ে পথিমধ্যে কমা-ো হামলায় ঘটনাস্থলেরই প্রাণ হারান গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ এর প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা(বর্মা)সহ ৬ জন। এরমধ্যে বর্মা ছাড়া দুইজন জনসংহতি সমিতির ছাত্র ও যুব কর্মী। এবং বাকীরা সাধারণ সমর্থক বলে জানা গেছে।

গত ২০১৮ সালের জুন ও জুলাই মাসে সুরেশ বিকাশ চাকমা, জঙ্গলী চাকমা, পঞ্চানন চাকমা, বিজয় কুমার চাকমা, শান্তি রঞ্জন চাকমা নামে এক জেএসএস কর্মীকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের জন্য ইউপিডিএফ (প্রসীত)কে দায়ী করেছিল জেএসএস (এমএন লারমা)। সর্বশেষ ২৬ জুলাই রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে খুন হন বন কুসুম চাকমা (৩০)। তিনি জেএসএস (এমএনলারমা) অংশের কর্মী বলে জানা যায়।
জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) অংশের রাজনৈতিক শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকেই ইউপিডিএফ’র সাথে তাঁদের সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়েছে। তখন থেকে এই পর্যন্ত দলটির ১২ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হয়েছেন পাঁচ নেতাকর্মী।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের নেতা নির্মলেন্দু চৌধুরী মনে করেন, অবৈধ অস্ত্রের কারণেই একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
তিনি আঞ্চলিক দলগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হত্যা-সংঘাত ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে সরকারের চলমান উন্নয়নে সম্পৃক্ত হবারও আহ্বান জানান।

পার্বত্য অধিকার ফোরামের সভাপতি মো: মাঈনউদ্দিন বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক খুন-খারাবি আর চাঁদাবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ। তাঁদের কাছে থাকা বিপুল সংখ্যক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার খর্ব হবে। এবং তাতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা রয়েছে।

পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মো: আব্দুল মজিদ বলেন, অস্ত্রবাজি-চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসীরা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।

‘সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)-খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ও নারীনেত্রী নমিতা চাকমা বিগত ছয় মাসে খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জেলা ও উপজেলা শহরে দিনে-দুপুরে জনপ্রতিনিধি-ছাত্র-যুবকদের প্রাণহানির ঘটনাই আমরা শংকিত। সাধারণ নিরীহ মানুষও হত্যার শিকার হচ্ছে। পাহাড়ে জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের পক্ষেই সম্ভব। সরকার ইচ্ছে করলেই এসব গুরুতর অপরাধ বন্ধ করতে পারে। আর যদি এটিকে পাহাড়িদের অভ্যন্তরীন সমস্যা বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তা কারোর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সা: সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোন মৃত্যুই কাম্য নয়। কিন্তু পাহাড়ে প্রতিনিয়ত হত্যা বেড়ে চলেছে। একের পর এক সংঘটিত হত্যাকা-ের সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না বলেই সন্ত্রাসের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। প্রশাসনের উচিত সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসে এই শ^াসরুদ্ধকর এবং অনিরাপদ অবস্থার উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা।

খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের অধিনায়ক ব্রি. জেনারেল হামিদুল হক বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে তল্লাশি পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রধারী অপরাধীরা জনগণের মাঝেই লুকিয়ে আছে। আমরা গোপন সূত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।

২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফর দলছুট কিছু নেতা জেএসএস এমএন লারমা গ্রুপের সাথে মিলে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। এর পর থেকে পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ভ্রাতৃঘাতী শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ। চুক্তি পরবর্তী ২০ বছরে ইউপিডিএফর ৩ শ’র মতো নেতাকর্মী প্রতিপক্ষের গুলিতে ও হামলায় নিহত হয়েছে। একই ভাবে অন্য আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (সন্তু) ও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গ্রুপেরও হতাহতের সংখ্যাও প্রায় ২ শতাধিক।

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions