বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪

কাউখালীতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে চলছে সোয়া ৩ কোটি টাকার কাজ

প্রকাশঃ ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০১:০১:৩৩ | আপডেটঃ ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৫৩:২১  |  ৮৭৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, কাউখালী, রাঙামাটি। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে চলছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ। এমনই অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা। সরেজমিন ঘুরে ও প্রকৌশলীর তরফ থেকে  ঠিকাদারকে দেয়া এক নির্দেশে তারই প্রমাণ মিলেছে। কাউখালী উপজেলার কাউখালী ঘাগড়া সংযোগ সড়কের ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার কাজ পায় রাঙামাটির প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএস-এমএম ট্রেডার্স। কাজের শুরু থেকেই নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজের অভিযোগ করে আসছিলো স্থানীয়রা। এর আগেও নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে জানিয়ে উর্দ্ধেতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলো উপজেলা প্রকৌশলী।

আবারও স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ৯ এপ্রিল (শুক্রবার) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে, ঠিকাদার কাজের সাইডে নিম্নমানের পাথর মজুদ করেছেন বলে উপজেলা প্রকৌশলী বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের আলোকে একইদিন উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারকে কাজের সাইড থেকে নিম্নমানের পাথর ৩ দিনের মধ্য অপসারণের জন্য নির্দেশ দেন। একই সাথে বিষয়টি অবহিত করেন নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, রাঙামাটিকেও। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদার প্রকৌশলীর নির্দেশকে অমান্য করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ কাজ। নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের একজন জানান, ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে প্রকৌশলীর নির্দেশ পাত্তাই দিতে চায় না ঠিকাদার।

প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানাযায়- ঘাগড়া কাউখালী সংযোগ সড়কের ঘাগড়া বাজার মুখ থেকে ২৬০০ মিটার (২.৬ কিলোমিটার) রাস্তায় বক্স কালবার্ট, সিলকোড, প্রয়োজনীয় জায়গায় কাপেডিং, রাস্তা ভাঙ্গন রোধে বন্য প্রতিরোধক ওপেন বক্স কালবার্ট (ভি কালবার্ট) নির্মাণের কার্যাদেশ পায় এসএস-এমএম ট্রেডার্স।

শনি ও রবিবার প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে- কাউখালী ঘাগড়া সংযোগ সড়কের জুনুমাছড়া এলাকায় দেখা যায় রাস্তার এল ড্রেন ও ওপেন বক্সে কালবার্ডের কাজ চলছে। এর মাঝে কাজ শেষে হয়েছে রাস্তার বক্স কালবার্ট। এল ড্রেনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কাজের সাইড থেকে সরিয়ে ফেলতে বলা নিম্ন মানের পাথর (কংকর) ও ইট দিয়ে। নিম্নমানের পাথর সরিয়ে নিতে নির্দেশনা থাকলেও কেনো এসব দিয়ে কাজ করছে জানতে চাইলে ওই কাজের রাজ মিস্ত্রি জানালেন এগুলো দিয়েই কাজ করতে বলেছে মালিক। লকডাউনের জন্য ভালো মাল আনতে পারছে না তাই।

একই এলাকার একটু দূরেই রাস্তা ভাঙ্গন রোধে চলছে ওপেন বক্স কালবার্ড নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। তারই পাশে বড় বড় ২টি স্থানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে নিম্নমানের পাথর (সিলেটি পাথরের মত)। ওই স্থানে কথা হয় কাজের মাঝি পরিচয় দেওয়া  বাচ্চু ও হান্নানের সাথে । এ পাথর কেনো এখনো সরানো হয়নি জানতে চাইলে তারাও দোহাই দিলেন লকডাউনের। নিম্নমানের পাথর কেনো আনালের জানতে চাইলে বলেন ভালো পাথর পাঠানোর জন্যই বলা হয়েছিলে। কিন্তু সিলেট থেকে এই পাথর পাঠিয়েছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করা স্বর্তে এলাকাবাসী জানান- সড়কের বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট গুলো নির্মাণ করা হয়েছে তা খুবই নিম্নমানের পাথর দিয়ে। সড়কের পাশে এখন যে বন্যা প্রতিরোধক যে ড্রেন ও রাস্তার এল ড্রেন গুলো করা হচ্ছে তা আর কি বলবো। এতটা খারাপ মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে যা বলার ভাষা আমাদের নেই। আমরা বারবার অভিযোগের পরও ঠিকাদার কিসের জোরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে উন্নয়নের জন্য, আর নাম মাত্র কাজ করে এলাকাবাসীকে ঠকিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ঠিকাদার নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ছে।

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার এতসব অভিযোগ যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, কথা হয় সে প্রতিষ্ঠানের মালিক জসিম এর সাথে তিনি জানালেন জিনিস গুলোতে আর আমরা বানাইনা কোন কারণে মাল খারাপ আসতেই পারে। অফিস থেকে যেহেতু পাথর সরানোর কথা বলা হয়েছে। আমার কথা পরিস্কার সরিয়ে ফেলবো। কেউতো আর ইচ্ছা করে মাল খারাপ দেয় না। তিনি আরও বলেন, আমি যদি ৮ টাকা দিয়ে মাল কিনতে পারি সাড়ে ৮ টাকা দিয়ে কি কিনতে পারবো না। আমারওতো বিল তুলতে হবে। জোর করে কাজ করার তো কোন সুযোগ নেই। নিম্নমানের পাথর সড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশের পরও কোন এল ড্রেনে নিম্নমানের পাথর (কংকড়) দিয়ে কাজ করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলনে বললেইতো আর সরিয়ে ফেলা যায়না। এখন নিতে গেলেতো আবার গাড়ী ভাড়া খরচ হবে আমার। ভালো মাল এলে ওই গাড়ীতে এগুলো নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন আমার কথা পরিস্কার কোন কারণে খারাপ মাল আসতেই পারে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে পরিবর্তন করা হবে।

কথা হয় কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র রায়ের সাথে তিনি জানান- এ নিয়ে ২য় বার নিম্নমানের মালামাল অপসারণের জন্য চিঠি দিয়েছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এরপরও যদি ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সমাগ্রীদিয়ে কাজ করে সেক্ষেত্রে পদেক্ষপ কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী জানান বিষয়টি যেহেতেু উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি উনারাই সিন্ধান্ত নিবেন এ বিষয়ে।

ঠিকাদারকে দেওয়া ২য় চিঠিতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ধর্ম মোহন চাকমা ও অমর বিকাশ চাকমা (এল.কে.এস.এস)’কে প্রকল্প থেকে নিম্নমানের মালামালম অপসারণ পূর্বক প্রতিটি কাষ্টিং এ স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কার্য সম্পাদন করার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রকৌশলী।

এদিকে এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বাঘাইছড়িতে এলজিইডির এডিবির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করার সময় অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিলো, কিন্তু তখনও এলজিইডি কোন ব্যবস্থা নেয়নি।



এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions