শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪
ইউপিডিএফ’র প্রতি অভিযোগের তীর, গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্ক

দীঘিনালায় প্রতিপক্ষের হামলায় ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতির স্ত্রী নিহত

প্রকাশঃ ১৫ অগাস্ট, ২০২০ ০৭:১০:৪০ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৫৫:৫৯  |  ২০৫৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগডাছড়ি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে সোনা মিয়া টিলা গুচ্ছগ্রাম ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেকের স্ত্রী নিহত হয়েছে। গতরাত (শুক্রবার) দেড়টার দিকে গুচ্ছগ্রামে ঢুকে আব্দুল মালেকের বাড়ি লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এতে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম(৪২) নিহত ও ছেলে মো. আহাদ(১০) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহত মো. আহাদ দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে।

আব্দুল মালেকের বাড়িতে হামলা করে চলে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা আশপাশের ৩ টি বাড়িতে গুলি ছুঁড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত না হলেও বাড়ি ঘরে ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মালেকের বাড়ির পাশে ইটের দেয়াল ও টিনের শেডের একটি বাড়ি। সে বাড়ির পাশে দেয়ালের সাথে একটি পর্যবেক্ষণ চৌকি। স্থানীয়রা জানান, পাশের বাড়িতে যে কয়েকজন পাহাড়ী যুবক থাকে তারা মাঝেমধ্যে পর্যবেক্ষণ চৌকিতে দাড়িঁয়ে থাকে। তবে পাহাড়ী যুবকরা কারা এবিষয়ে স্থানীয়রা কেউ কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।  

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন নাম না প্রকাশে শর্তে জানান, রাত ১ টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তিনি উঁকি দিয়ে দেখেন, সভাপতির বাড়িতে দিক থেকে গুলি করতে করতে ৫ জন যুবক ধান খেত দিয়ে বের হয়ে যায়। তার কিছু পরও গুলির শব্দ শোনা যায়।  

বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা হোসনেআরা বেগম জানান, কিছুদিন পরপর এলাকায় গোলাগুলি হয়। গতরাতে সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। গুলির শব্দ শুনে মাটিতে শুয়ে পড়ায় ছেলের বউ ও নাতিকে নিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। এখনও আতঙ্ক কাটছে না।

মো. আবুল নামে আরেকজন জানান, শান্তি চুক্তির পর এমন ঘটনা তিনি আর দেখেনি। সভাপতি আব্দুল মালেকের বাড়িতে হামলা করে চলে যাওয়ার সময় তার বাড়িসহ আশপাশের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ধান খেত দিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলিতে বাড়ির টিন, আসবাবপত্র ও গৃহস্থলী সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সোনামিয়া টিলা ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামে আঞ্চলিক সংগঠনের বেশকিছু কর্মী অবস্থান করছিল। তবে তারা কোন দলের তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। গুচ্ছগ্রামে থাকাদের ‘মেহমান’ জানিয়ে আব্দুল মালেক আরও বলেন, মেহমানদের যেন বের করা দেয়া হয় সে লক্ষে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের লোকজন একাধিকবার হুমকি দেয়। বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানানোর পর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন ঘটনা।

তবে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সংগঠক অংগ্য মারমা হামলা ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের বিরোধীতা করে আসছে। হত্যা, গুম ও অপহরণের রাজনীতিতে ইউপিডিএফ বিশ^াস করে না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ’কে দায়ী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ জানান, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো আধিপত্য বিস্তারের জেরে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। মামলা হলে এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সাল থেকে নিরাপত্তা জনিত কারণে দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকার সোনামিয়া টিলা এলাকার পুনর্বাসিত বাঙ্গালী পরিবারদের সরিয়ে বাবুছড়া বাজারে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাঙ্গালীরা আর জমি ও বসত ভিটায় ফিরতে পারেনি। এরপর থেকে ভূমি ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে নামে বাঙ্গালীরা। সোনামিয়া টিলা ভূমি রক্ষা কমিটির নামে সংগঠন গঠন করা হয়।

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions