বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪
বান্দরবানের

সাবেক জজ ও জেলা প্রশাসক বিরুদ্ধে বেনামী অভিযোগ করার অভিযোগে জজ আদালতের কর্মচারীসহ ৩জন জেল হাজতে

প্রকাশঃ ২১ অগাস্ট, ২০১৯ ১০:৫৮:২৪ | আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪ ১১:৩১:৪০  |  ২৮৪০
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের সাবেক জেলা জজ মোঃ শফিকুর রহমান ও সাবেক জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেনামী ও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রেরণের অভিযোগে জেলা জজ আদালতের কর্মচারী সবীব দত্তসহ তিনজন জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

জেলা জজ আদালতের সুত্রে জানা যায়, গত ১৯আগষ্ট মোঃ মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করতে গেলে তার কথাবার্তায় বান্দরবান জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন এর সন্দেহ হয়। এরপরই অভিযোগকারী মোঃ মহিউদ্দিনকে নিয়ে ঘটনাস্থল জজকোর্ট সংলগ্ন বিসমিল্লাহ স্টোরে তদন্ত করতে যান। তদন্তকালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জাকির হোসেন খান, বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মহিউদ্দিন, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মোঃ শামীম হোছাইন, জেলা জজ আদালতের প্রধান তুলনা সহকারী সবীব দত্ত, উক্ত দোকানের টাইপিস্ট মোঃ সাইফুল ইসলাম, গানম্যান অর্পন, ড্রাইভার জহির, অফিস সহায়ক সন্তোষ ও জেলা জজ আদালতের নাজির বেদারুল আলম উপস্থিত ছিলেন।  

তদন্তকালে উক্ত দোকানের ডিপ ফ্রিজের উপরে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের অপর-৫২২/১৫ মামলার মূল নথি এবং দোকানের বিভিন্ন স্থানে আদালতের বিভিন্ন মামলায় গৃহিত জবানবন্দির ফটোকপি ও টাইপকৃত ফলিওসহ টেবিলের উপরে একটি কালো ব্যাগে একটি ল্যাপটপ দেখতে পায়। ৩নং অভিযুক্ত মোঃ সাইফুল ইসলামের দেখানো মতে উক্ত ল্যাপটপের বিভিন্ন ফোল্ডারে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিভিন্ন মামলার টাইপকৃত ডকুমেন্ট এবং জেলা জজ এর কার্যালয়ের বিভিন্ন গোপনীয় অফিসিয়াল পত্র সমূহ দেখা যায়। এছাড়াও দুইটি ফোল্ডারে বান্দরবান জেলার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান, বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা,বান্দরবান জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক তারিকুল ইসলাম, জনতা ব্যাংক, বান্দরবান শাখার ব্যবস্থাপক, লালমনিরহাটের জেলা রেজিস্ট্রার সহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুৎসামূলক মানহানিকর বিপুল পরিমাণ বেনামি চিঠি দেখা যায়।

উপস্থিত স্বাক্ষী ও আটককৃত অভিযুুক্তের উপস্থিতিতে বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  আবদুল্লাহ আল মামুন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের অপর-৫২২/১৫ মামলার মূল নথি, আদালতের বিভিন্ন মামলার জবানবন্দির ফটোকপি ও টাইপকৃত ফলিও, ঘটনাস্থলের টেবিলের উপরে থাকা কালো ব্যাগে একটি ল্যাপটপ,একটি ফটোকপি মেশিন, একটি লাল রংয়ের কাপড়-চোপড়সহ ট্রাভেল ব্যাগ জব্দ করেন।

সুত্রে আরো জানা যায়, অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যাবতীয় বেনামী চিঠি সমূহ মোঃ সাইফুল ইসলাম টাইপ করতেন।  উক্ত জব্দকৃত মালামাল সমূহ ঘটনাস্থল সংলগ্ন জজ কোর্টের নীচতলার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়ে আসার পরে ৩নং অভিযুক্ত মোঃ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে স্বীকার করেন জেলা জজ আদালতের নকল শাখার প্রায় সকল কাজ ১নং অভিযুক্তের নির্দেশনা ও সরবরাহমতে এবং তার তৎকালীন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালত সংলগ্ন এই ঘটনাস্থলটিতে করা হতো। নকল শাখায় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আদালতের পাশের্^র একটি দোকানে প্রচলিত আইন লংঘন করে নকল শাখার কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত অপর ৫২২/২০১৫ মামলার নথি সংক্রান্তে ১নং অভিযুক্ত সবীব দত্ত উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে স্বীকার করেন তিনি নথিটি ঐ দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত ল্যাপটপটি দোকানের মালিক ২নং অভিযুক্ত মোঃ মহিউদ্দিন কর্তৃক ক্রয়কৃত। উক্ত ল্যাপটপের ‘ডি’ ড্রাইভের আরিফুর রহমান নামীয় ড্রাইভটির নিউ ফোল্ডারের “২০১৮” নামীয় ফোল্ডারের বিপুল পরিমাণ বেনামী চিঠি পরিলক্ষিত হয়।

অভিযুক্ত সবীব দত্ত ঘটনা স্থলে উপস্থিত সকলের সামনে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন যে, সাবেক জেলা জজ লা মং এর নির্দেশে তিনি ও অন্যান্যরা এসব বেনামী চিঠি টাইপ করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতেন বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য। এই কাজে তাকে জেলা জজ আদালতের সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী উবাশৈ মার্মা, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ক্যাশ সরকার বাবু মং, জারীকারক রুহুল আমিন সহযোগীতা করতেন। উক্ত অভিযুক্তদের বক্তব্য বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন লিপিবদ্ধ করেন। জজ আদালতের কর্মচারী সবীব দত্ত আগেও ঠাকুরগাও জেলা জজ আদালতে কর্মরত থাকাকালীন দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে ০২বার চাকুরী থেকে চুড়ান্তভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ ০৩ বছর পর চাকুরী ফেরত দিয়ে ঠাকুরগাও থেকে বান্দরবান শাস্তিমূলক বদলী করেন।

“২০১৮” নামীয় ওয়ার্ড ফাইলটি পর্যালোচনায় উক্ত ফাইলটিতে বান্দরবান জেলার সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান, বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বান্দরবানের সাবেক জেলা প্রশাসক তারিকুল ইসলাম, জনতা ব্যাংক, বান্দরবান শাখার ব্যবস্থাপক, লালমনিরহাটের জেলা রেজিস্ট্রার সহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা, মনগড়া ও কুৎসামূলক মানহানিকর বিপুল পরিমাণ বেনামি চিঠি পরিলক্ষিত হয় এবং বিভিন্ন ফোল্ডারে জেলা জজ আদালতের গোপনীয় চিঠিসহ বিভিন্ন আদালতের নথির কয়েক হাজার পেইজ টাইপ করা কপি রয়েছে দেখা যায়।

উক্ত বেনামী মানহানিকর, কুৎসামূলক চিঠিসমূহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, প্রধান বিচারপতির দপ্তর, বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের  সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, কয়েকটি জেলার জেলা ও দায়রা জজ, জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

উক্ত বেনামী চিঠি সমূহ “বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ”, “চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ” “উচাই মার্মা” “সাইদুল ইসলাম” সহ বিভিন্ন নামে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযুক্তগণ ও অপরাপর অজ্ঞাত ব্যক্তিগণ পরস্পর যোগসাজসে বিচার বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তাগণকে ক্ষতিগ্রস্থ করে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য কুচক্রীমহলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে আদালতের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে নথী অফিসের বাহিরে নিয়ে গিয়ে টাইপ করিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ধারা ২৫(১) (ক), ২৯, ৩২, ৩৫ এবং  Officil Secrets Act, 1923 , ১৯২৩ এর ধারা ৫ (১) (এ) (ডি) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।

বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions